যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরি হারাচ্ছেন দুই শিক্ষক

বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের প্রাক্তন দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে চাকরি হারাচ্ছেন দুই শিক্ষক। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষ করতোয়ায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক।

জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ। তিনিও পর্ষদের সভায়ও উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে মাসুম আলী বেগ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আবদুল মোত্তালিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। ছাত্রীদের সঙ্গে ওই দুই শিক্ষকের আচরণ শিক্ষাসুলভ ছিল না। তদন্ত কমিটি দুই শিক্ষককে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের সুপারিশ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গতকাল পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই দুই শিক্ষককে চূড়ান্ত বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করার লিখিত সুপারিশ বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্প্রতি ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবদুল মোত্তালিবের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত প্রাক্তন এক ছাত্রী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি ২১ আগস্ট রাতে ফেসবুক মেসেঞ্জারে অশ্লীল প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ করেন ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করা ওই ছাত্রীকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। অশ্লীল ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া ও বাড়াবাড়ি করলে ক্ষতি হবে বলেও শাসানো হয়। ফোনালাপের অডিও ও অশ্লীল প্রস্তাবের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন আরেক প্রাক্তন ছাত্রী। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, গত ২০ জানুয়ারি এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান তিনি। সেখানে ওই প্রভাষকের সঙ্গে দেখা হয়। সন্ধ্যার সময় তিনি নিজের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে দেখে সালাম দেন। তিনি বাসায় নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। রাজি না হওয়ায় তাঁকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। বাসায় নিতে হাত ধরে টানাহেঁচড়াও শুরু করেন। পরে তিনি (মেয়েটি) চিৎকার দিলে ওই শিক্ষক তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। গত ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। কিন্তু বিচারের বদলে উল্টো অভিযোগ প্রত্যাহারের চাপ শুরু হয়। শিক্ষকেরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান। বিষয়টি মীমাংসা করতে মেয়েটিকে বাধ্য করা হয়।
প্রাক্তন দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিষয়টি গণমাধ্যমে জানতে পেরে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তা তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক কামাল হোসেনের নেতৃত্ব তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি সরেজমিন তদন্তে এসে অভিযোগের সত্যতা পায়। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আলাদা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।