রংপুরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দুটি খালের সংস্কার দাবি

জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়ে তোলার জন্য শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল দখলমুক্ত ও খনন করার দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ। আজ সোমবার নগরীর প্রেসক্লাবের সামনেপ্রথম আলো

রংপুর নগরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল খনন এবং সংস্কারের দাবি জানিয়েছে ‘রংপুর মহানগর উন্নয়ন ফোরাম’। আজ সোমবার সংগঠনটি এ দাবিতে মানববন্ধনও করেছে। রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে রংপুর মহানগর উন্নয়ন ফোরামের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়ে তুলতে শ্যামাসুন্দরী ও কে ডি খালকে দখলমুক্ত করে জনদুর্ভোগমুক্ত নান্দনিক রংপুর সিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

শ্যামাসুন্দরী খালটি ১৩০ বছরের পুরোনো। মূলত নদী হলেও এটি খাল হিসেবে পরিচিত। রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে এ খাল পুনঃখনন করেছিলেন।

মানববন্ধন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল আলম। এ সময় বক্তব্য দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কাওসার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ প্রমুখ।

বক্তারা সিটি করপোরেশনের অনিয়ম–দুর্নীতির কারণে এই খাল খননসহ নগরীর উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে দাবি করে বলেন, গত শনিবার এক রাতের ভারী বর্ষণে প্রমাণিত হয়েছে রংপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ। দীর্ঘদিন ধরে শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল খনন-সংস্কার না করে উল্টো ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ড্রেনেজ–ব্যবস্থা সবই অনুন্নত।

কেডি খালটি শহরের উত্তর-পূর্ব এলাকার পয়োনিষ্কাশনের জন্য দেড় শ বছর আগে খনন করা হয়। তৎকালীন পৌর প্রশাসক কৃষ্ণধন ঘোষ (কেডি ঘোষ নামে পরিচিত) প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটি খনন করেন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান মেয়র সিটি করপোরেশনকে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। উন্নয়নের নামে শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খালের উন্নয়ন–সংস্কার না করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এদিকে মানববন্ধন সমাবেশে করা অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনো খালের প্রকৃত উন্নয়নকাজের বরাদ্দ হয়নি। তবে খালের পাড় দখল করা ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ১১টি বাদে বাকি সব স্থাপনা ইতিমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকি ১১টির আপত্তি থাকায় কিছুটা সময় নিচ্ছে। আশা করি, এটিরও সমাধান হয়ে যাবে।’

মেয়র আরও বলেন, এই খাল খননকাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে খাল খননের আগে সিটি করপোরেশন খালের দুই পাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ করবে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্প পরামর্শকও নিযুক্ত করা হয়েছে।

শ্যামাসুন্দরী খালে এভাবে ময়লা ফেলে নগরবাসী। ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়। একজন রিকশায় করে ময়লা এনে ফেলছেন। ছবিটি গত সোমবার রংপুরে নগরের সেনপাড়া সেতু এলাকায়
মঈনুল ইসলাম

প্রসঙ্গত, রংপুর মহানগরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালটি ১৩০ বছরের পুরোনো। মূলত নদী হলেও এটি খাল হিসেবে পরিচিত। রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে এ খাল পুনঃখনন করেছিলেন। জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পয়োনিষ্কাশনের উদ্দেশ্যে খনন করা এ খাল ১৬‍ কিলোমিটার দীর্ঘ, স্থানভেদে ২৪ ফুট থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত চওড়া এ খালটি বর্তমানে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে।  

শহরের উত্তর–পশ্চিমে কেল্লাবন্দ এলাকার ঘাঘট নদ থেকে খালটি উৎপন্ন হয়ে নগরীর সব পাড়া-মহল্লার বুক চিরে ধাপ পাশারিপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সীপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহীগঞ্জের কেডি খাল স্পর্শ করে মিশেছে খোকসা ঘাঘট নদে।

কেডি খালটি শহরের জলকরের চিকলি বিল এলাকা থেকে ইসলামপুর, হনুমানতলা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, শালবন, শালবন মিস্ত্রিপাড়া, কামালকাছনা, রবার্টসনগঞ্জ, মণ্ডলপাড়া, মাহিগঞ্জ হয়ে বুড়ি তিস্তা নদীতে গিয়ে মিলেছে। শহরের উত্তর-পূর্ব এলাকার পয়োনিষ্কাশনের জন্য দেড় শ বছর আগে তৎকালীন পৌর প্রশাসক কৃষ্ণধন ঘোষ (কেডি ঘোষ নামে পরিচিত) প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটি খনন করেন।