রংপুরে নিত্যপণ্যের বাজার চড়া

এক সপ্তাহে বেড়েছে সবজির দাম। সিটি বাজার, রংপুর, ৩১ আগস্টমঈনুল ইসলাম

তিন দফা বন্যায় প্রভাব পড়েছে রংপুর সদর ও আশপাশের উপজেলার কাঁচাবাজারে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। এতে সবজির সরবরাহ কমে গেছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে কয়েক দিনের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে।

কয়েক সপ্তাহ ধরেই রংপুরের বাজারে বাড়ছে সবজির দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষ করে বেকায়দায় পড়েছেন সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। করোনাভাইরাসের কারণে একে তো আয়-রোজগার কম, তারওপর পণ্যের চড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে তাঁদের।

রংপুরে প্রায় প্রতিটি বাজারে সবজিতে কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। প্রকারভেদে মাছের দামও বেড়েছে। মুরগি বা গরুর মাংসের দামেও কিছুটা হয়েছে পরিবর্তন। নগরের সিটি বাজার, ধাপবাজার, মাহিগঞ্জ ও কামালকাছনা বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

রংপুরের সবচেয়ে বড় বাজার হলো সিটি বাজার। সেখানে সোমবার প্রতি কেজি আলু ৩৫ টাকা, মরিচ ২০০, বেগুন ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, পটোল ৪০, ঢ্যাঁড়স ৫০, বরবটি ৫০, করলা ৬০, গাজর প্রকারভেদে ৬০-৭০, ধনেপাতা কেজি ১৫০, পেঁপে ৪০, শসা ৪০, লাউ প্রতিটি ৫০-৫৫, কচুর লতি ৪০-৪৫, প্রকারভেদে শাকের আঁটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহ আগে এসব সবজি বিক্রি করেছেন ১০-২০ টাকা কমে।

বিক্রেতাদের দাবি অতিবর্ষণ ও বন্যায় সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে সবজির সরবরাহ কম। কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা বেড়েছে। এসব কারণে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে নানা ধরনের সবজিপণ্য। আর বেশি দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে।

রংপুর নগর এলাকার একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘এই এক সপ্তাহ আগেও যে সবজি কিনেছি। এখন সেই সবজি কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেশি। সবজি কিনতেই আমাদের নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

সিটি বাজারের সবজি ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রংপুরসহ আশপাশের জেলায় কয়েক দফা বন্যা হয়েছে। সবজিখেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এ ছাড়া বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।

গরুর মাংস ও মুরগির দামও কমছে না। ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা কেজি, সোনালিকা মুরগি ১৪০-১৪৫ টাকা। ২৩০-২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে লেয়ার। আর গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৮০-৬০০ টাকা। এ ছাড়া ৬০০-৭০০ টাকা কেজির নিচে কোনো ইলিশ মিলছে না বাজারে। বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। প্রকারভেদে ছোট মাছের কেজি ৫০০-৭০০ টাকা।

রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, অতিবর্ষণ ও বন্যার কারণে সবজিখেত নষ্ট হয়ে থাকে। ফলে বাজারে এসব সবজির আমদানি কমে যায়। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

এদিকে এক মাস আগেও রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা বাজারে প্রতি কেজি পটোলের পাইকারি দর ছিল ২৫ টাকা। খুচরা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকায় পাওয়া যেত সেসব পটোল। মাস না ঘুরতেই সেই পটোল এখন ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পটোলের মতো অনেক নিত্যপণ্যের দামই তারাগঞ্জে বেড়েছে।

মেনানাগর গ্রামের দিনমজুর নাহিদ হাসান বলেন, ‘বাবা, হামার খুব কষ্ট হইছে। এমনি তো কামাই (আয়) নাই। তাঁর ওপর প্রতিদিন সবজির দাম বাড়োছে। সংসার চালাইতে হামার খুব কষ্ট হওছে। ৩৫ টাকার পটোল ৫০ টাকাত কিনবার নাগোছে। বেগুন, করলা, পেঁপের দামও বাড়ছে। পানিত শাকসবজি মরি যাওয়ায় এমতোন করি কাঁচা বাজারত আগুন লাগছে।’

সোমবার তারাগঞ্জের বিভিন্ন সবজি-বাজারে ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টির আগে প্রতি কেজি করলার দাম ছিল ৩০ টাকা। এখন তা ৫৮–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মরিচের কেজি ছিল ৬০ টাকা, এখন হয়েছে ১৩০ টাকা। ২০ টাকার ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকায়, ২০ টাকার বেগুন ৩৫ টাকা, ২০ টাকার আলু ৩২ টাকা, ১২ টাকার শসা ২৮ টাকা, ২৫ টাকার ঝিঙা ৪০ টাকা, ১২ টাকার পেঁপে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে।

ওকড়াবাড়ি হাটে বাজার করতে আসা ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, তারাগঞ্জে সবজির দাম একলাফে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ১০ টাকা কেজির পুঁইশাক, লাউশাক এখন ২৫ টাকা। ৬০ টাকার কাঁচা মরিচ এখন ১৩০ টাকা কেজিতে কিনতে হলো। এভাবে সবজির দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ছে।


ওকড়াবাড়ি বাজারে কথা হয় সবজি ব্যবসায়ী আলামিন ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণেই বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। অনেক জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া যে জমি ভালো আছে, সেখানে ফলন কম। এ জন্য দাম বেড়ে গেছে।

ভীমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে লাগানো খেত থেকে পটোল তুলছেন অদূত ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিত পটোল চাষ করছুন। বৃষ্টির আগোত ভালো পটোল পাছুন। সপ্তাহে ১০০ কেজি করি পটোল তুলছুনু। দ্যাওয়ার পানির পর সেই জমি থেকে মাত্র ২০-২৫ কেজি পটোল পাওছুন।’

ওই গ্রামের আরেক কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মুইও ২৫ শতক জমিত মরিচ নাগাছনু। বৃষ্টির আগোত সপ্তাহে সপ্তাহে দেড় মণ মরিচ তুলি হাটোত বেচাছুন। এ্যালা পাঁচ কেজি মরিচও পাওছুন না।’

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেক সবজিখেত নষ্ট হয়েছে। এ কারণে সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে।