রংপুরে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম

সোমবার থেকে লকডাউন। তাই রংপুর নগরের সিটি বাজারে ক্রেতাদের ভিড়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

লকডাউন ও পবিত্র রমজানের প্রভাবে আজ রোববার রংপুরে নিত্যপণ্যের বাজারে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এই সুযোগে এক দিনের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের প্রতিটি পণ্য ৫ থেকে ১০ টাকা, আবার কোনো পণ্য কেজিপ্রতি ২০ টাকাও বেড়েছে।

এদিকে হঠাৎই নিত্যপণ্যে দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের লোকজন বিপাকে পড়েছেন। সেই সঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্রেতারা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ, নতুন করে করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়া, লকডাউন ঘোষণা এবং পবিত্র রমজান উপলক্ষে মানুষের কেনাকাটায় এক দিনেই চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বেশি মুনাফার লোভে সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকেই।

রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, জেলার প্রধান সিটি বাজারে প্রবেশে শত শত মানুষের জটলা। দলে দলে লোকজন বাজার থেকে বের হচ্ছেন, আবার একই সঙ্গে  বাজারে প্রবেশ করছেন। ফলে বাজারের সামনে সকাল থেকে দিনভর জটলাই থাকছে। এ সময় লোকজনকে ব্যাগভর্তি বাজার করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

শহরের গুপ্তাপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক রমজান আলী বলেন, ‘এমনিতেই রমজান মাসের খরচ। তার ওপর হঠাৎ করে লকডাউন। বাড়ি থেকে যেন বের হতে না হয়, এ জন্য মাসের নিত্যপণ্যের বাজারে খরচ করা হলো।’

সিটি বাজারে মানুষের ঠাসাঠাসি অবস্থা। বিক্রেতাদেরও হিমশিম খাওয়ার উপক্রম। ক্রেতারা যে দরদাম করে পণ্য কিনবেন, তারও কোনো উপায় নেই। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এক দিন আগে পণ্যের যা দাম ছিল, তা লাফিয়ে প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আবার কোনো পণ্যের দাম ২০ টাকাও বেড়েছে।

পেঁয়াজের দাম তেমন একটা না বাড়লেও আদা-রসুনের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। ৪০ টাকা কেজির আদা রোববার বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। আর ৪০ টাকা কেজির রসুন বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। কাঁচা মরিচের দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে।
৪০০ টাকার দেশি মুরগি ২০ টাকা বেড়ে ৪২০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। ২৫০ টাকার পাকিস্তানি মুরগি ২৬০ ও ১৬০ টাকার ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে।
ঝাউ আলু কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে, যা এক দিন আগে ছিল ৩৫ টাকা। হল্যান্ড আলু ১৫ টাকা, এক দিন আগে ছিল ১২ টাকা। স্থানীয় জাতের শিল আলু কেজি ২৫ টাকা, যা এক দিন আগে ছিল ২০ টাকা। ১০ টাকা কেজির টমেটো একলাফে হয়েছে ২০ টাকা, ৩৫ টাকা কেজির বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, ৪০ টাকা কেজির শজনে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। এ ছাড়া ১৫ টাকা কেজির গাজর ২০ টাকা, ২৫ টাকার শসা ৩০ টাকা, ২৫ টাকার পেঁপে ৩০ টাকা, ২৫ টাকার প্রতি পিস লাউ ৩০ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। ২৫ টাকা হালির লেবু হয়েছে ৩২ টাকা।

এদিকে মাছের বাজার ছিল আগের মতোই। রুই মাছের কেজি ২৬০ টাকা, কাতলা ৩০০, শিং ৩৫০, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা; দেশি মাগুর ৬০০ টাকা, সিলভারকার্প ১৩০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সিটি বাজারের ব্যবসায়ী মনজুর কাদের বলেন, আদা-রসুনের চাহিদা বেড়েছে। আর পণ্য আমদানি কম। বেশি দামে কিনতে হওয়ায় বিক্রির দামও বেড়ে যায়। তবে প্রতিটি পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে, এর সত্যতা রয়েছে বলে তিনি জানান।

একজন রিকশাচালক সুরুজ মিয়া বলেন, ‘নতুন করি লকডাউন হওয়ায় ফির হামার কোমর ভাঙি পড়বে। তার ওপর সব জিনিসের দামও বাড়ি গেল। গরিব মানুষের অবস্থা এবার আরও কাহিল হয়া পড়বে।’

এ ব্যাপারে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়ে বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে হবে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজানে যেন কোনো পণ্যের দাম না বাড়ে, এ জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খুব শিগগির বৈঠক করা হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে জোর দেওয়া হবে।