রংপুরের তারাগঞ্জে ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি

  • কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে মাটি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী।

ইটভাটায় নেওয়ার জন্য আবাদি জমির মাটি ট্রলিতে ভরা হচ্ছে। শনিবার তারাগঞ্জের বরাতি মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে জমির উর্বরতা।

তবে এ বিষয়ে কৃষকদের অনেকই সচেতন নন। নগদ টাকা পেয়ে অনেক জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। একশ্রেণির ব্যবসায়ী কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এসব মাটি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জে ১২ হাজার ২৩ হেক্টর আবাদি জমি আছে। ৯-১০ বছর ধরে এসব আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে ঘুরে কৃষকদের আবাদি জমির মাটি বিক্রি না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও অনেক কৃষক নগদ টাকার লোভে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করছেন।

উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে অন্তত ২৫টি ইটভাটা রয়েছে। শীত মৌসুমে এসব ভাটায় ইট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার উপজেলার ইকরচালী, হাড়িয়ারকুঠি, কুর্শা ও আলমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইটভাটাগুলোয় মাটি কিনে মজুত করা হচ্ছে। সরকারি বিধি মোতাবেক কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম না থাকলেও এসব ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

মুই নগদ টাকার লোভে জমির মাটি বেচে ভূইখান নষ্ট করছুং। এ্যালা তো আগের মতোন ফসল হয় না। জমির মাটি বেচে যে ভুল করছুং তাক এ্যালা হারে হারে বুঝির পাওছুন।
মকবুল হোসেন, শেরমস্ত গ্রামের কৃষক
আবাদি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার জন্য ট্রলি ভরাট করা হচ্ছে। শনিবার রংপুরের তারাগঞ্জের বরাতি মাঠে
প্রথম আলো

খিয়ারজুম্মা মাঠে কথা হয় দোয়ালীপাড়া গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খিয়ার জুম্মার মাঠোত তো সাত কোণা ইটের ভাটা। ভাটার জন্যে তো ভূঁইয়োত ধান আবাদ করলেও ভালো ফলন হয় না। প্রতিবছর হামার কষ্টের ফসল ভাটার তকনে নষ্ট হয়। তা ছাড়াও অভাবের সময় নগদ টাকা পাওছি জন্যে জমির মাটি বেচাওছি। কিন্তু জমির মাটি বেচাইলে যে আবাদের ক্ষতি হয়, তাক হামার জানা নাই।’

উপজেলার শেরমস্ত মাঠে আলুখেতে কাজ করছেন শেরমস্ত গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘মুই নগদ টাকার লোভে জমির মাটি বেচে ভূইখান নষ্ট করছুং। এ্যালা তো আগের মতোন ফসল হয় না। জমির মাটি বেচে যে ভুল করছুং তাক এ্যালা হারে হারে বুঝির পাওছুন।’

আলমপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়াজেদ হোসেন বলেন, মূলত ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ শতাংশ যে জৈব উপাদান দরকার, তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে আট ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা আবাদি জমির উপরিভাগের দেড় থেকে তিন ফুট পর্যন্ত কেটে নিচ্ছে। এতে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে। ফলে ভালো উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এসব জমি দ্রুত হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা শক্তি।