রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে ছুটছেন তাঁরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বৃদ্ধা কবিতা রায়ের (৭২) রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব কমে গিয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতে তিন ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। দিনভর রক্তদাতা খুঁজে হয়রান তাঁর নাতি প্রণব রায়। তিনি সমস্যার কথাটি পরিচিতি একজনকে জানালে ওই ব্যক্তি ‘দাকোপ ব্লাড ব্যাংক’ নামের ফেসবুক গ্রুপে একটা পোস্ট দেন। মিলে যায় রক্তদাতার খোঁজ। বৃদ্ধাকে খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রক্ত দিয়েছেন সংগঠনের এক সদস্য।

এ ঘটনা গত রোববারের। এদিকে রক্ত পেয়ে প্রণব রায়ও ভীষণ খুশি। বলেন, ‘কোনোভাবেই রক্ত ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। পরিচিতদের এক-দুজনের গ্রুপ মিললেও করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে তাঁরা হাসপাতালে আসতে রাজি নন। “দাকোপ ব্লাড ব্যাংক” এত দ্রুত রক্ত ম্যানেজ করে দেবে, সেটা আমি ভাবতেই পারিনি। আমাদের খুব উপকার হয়েছে। আমিও ওই সংগঠনে যোগ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

রক্তদাতা সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘সময় যতই সংকটময় হোক না কেন, কারও পাশে দাঁড়াতে পারলে অনেক ভালো লাগে। আর স্বেচ্ছাসেবাই তো মানুষকে সমৃদ্ধ করে।’

এ রকম আরেক ঘটনায় খুলনা নগরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তের অভাবে জরুরি অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছিল না অলোকা মণ্ডলের। এবারও এগিয়ে এল ওই সংগঠন। রিয়াজ নামের সংগঠনটির একজন সদস্য রক্ত দেওয়ায় অলোকার সংকট কেটে গেছে। অলোকার স্বজন সুব্রত মণ্ডল বলছিলেন সে কথাই, ‘যিনি রক্ত দিলেন, তাঁকে আমরা চিনতাম না। করোনাকালে তাঁরা যেভাবে এগিয়ে এলেন, সেই ঋণ ভোলার নয়।’

করোনার এই দুঃসময়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে দাকোপের বিভিন্ন এলাকার কিছু উদ্যমী তরুণ গড়ে তুলেছেন অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠন। ‘একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন’—এ রকম কোনো আহ্বানের অপেক্ষায় থাকেন সংগঠনের সদস্যরা। আর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছুটে বেড়ান তাঁদের জীবন বাঁচাতে। পৌঁছে যান হাসপাতালে। হাসিমুখে ফেরেন রক্ত দিয়ে।

>

করোনার এই দুঃসময়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দাকোপের কিছু উদ্যমী তরুণ গড়ে তুলেছেন অনলাইনভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা অসীম ঘরামী শোনান তাঁদের এক হওয়ার পটভূমি। বলেন, তিনটি আলাদা দ্বীপ নিয়ে দাকোপ উপজেলা। এখানকার রাস্তাঘাট এখনো অতটা ভালো নয়। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে কোনো সেতু নেই। চিকিৎসা পেতে এখানকার মানুষকে অনেক বেগ পেতে হয়। আর করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সংকট আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে রক্তের সংকটে অনেক রোগী ও স্বজনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে রক্তের সংকট কাটাতে ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে রোগীদের সেবা দিতে গত ১৪ মে রাতে স্থানীয় বেশ কিছু তরুণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়ে অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে পরিকল্পনা করি। সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটা ফেসবুক গ্রুপ খুলি। ১৫ মে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজন রোগীকে রক্ত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু।’

এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন মানুষকে রক্ত দিতে পেরেছেন সংগঠনটির সদস্যরা। রক্তদাতা ও সংগঠনের সদস্য হিসেবে এরই মধ্যে নিবন্ধন করেছেন দাকোপের বিভিন্ন এলাকার ২০০ তরুণ-তরুণী। আর ফেসবুক গ্রুপটির সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন সদস্য বাড়ছে।

চালনা কলেজের একজন প্রদর্শক আবদুল জব্বার হাওলাদার তরুণদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে চালনাতে অস্থায়ীভাবে সংগঠনের জন্য একটি অফিসের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, যান্ত্রিক জীবনে সবাই যখন প্রতিযোগিতার দৌড়ে ব্যস্ত, তখন একদল তরুণ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন মানুষের জন্য।