রক্তক্ষরণে এখনো মৃত্যু হচ্ছে

খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণজনিত রোগীরা মূলত বাইরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে।

  • ২০২১ সালে প্রথম ৪ মাসে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৬টি। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৬৫৫টি।

  • এ বছর চার মাসে মাতৃত্বকালীন মৃত্যু হয়েছে ২৭টি। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ২ হাজার ২৩৪টি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২৭ জন নারীর মাতৃত্বকালীন মৃত্যু হয়েছে। অথচ গত বছরের প্রথম ৪ মাসে এ সংখ্যা ছিল ছয়টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর হারও। চিকিৎসকেরা বলছেন, খিঁচুনি (একলামশিয়া) ও প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণজনিত কারণে এ মৃত্যু হচ্ছে।

এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ শনিবার দেশের নিরাপদ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করা হচ্ছে। মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে এ দিবস পালন করছে সরকার। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব–পরবর্তী সময়ে সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ হলো নিরাপদ মাতৃত্ব। রাজশাহীতে এ দিবস উপলক্ষে উপজেলা পর্যায়ে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা, কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার ৩৬১ জনের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। আর ৫৭ শিশুর প্রসব অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়েছে। মাতৃত্বকালীন কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৮৮৮ জন মায়ের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়েছে ৫৩টি। মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দুটি। একটি জেলার চারঘাটে ও আরেকটি দুর্গাপুরে। গাইনি বিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদ না থাকার কারণে উপজেলা পর্যায়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব কম হয়। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে বা জটিল রোগী হলে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ‘মডার্ন লেবার কমপ্লেক্স’ তৈরি করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত চার মাসে এই হাসপাতালে মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২৭টি। জানুয়ারি ও এপ্রিল মাসে ৯টি করে, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩টি ও মার্চ মাসে ৬টি। এই সময়ে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ২ হাজার ২৩৪টি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ২ হাজার ২৩৪টি। এ সময়ে মাতৃত্বকালীন জটিলতা নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ হাজার ৬৯৮ জন রোগী।

২০২১ সালে এই ৪ মাসে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৬টি। স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৬৫৫টি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয় ৫৬৭টি।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের মডার্ন লেবার কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি প্রসূতি ওয়ার্ডের সঙ্গে করিডর যুক্ত করে একটি টিনশেডের একতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ১৫টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নার্স বলেন, এখানে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য রোগীদের প্রথমে নিয়ে আসা হয়। স্বাভাবিক প্রসব হলে রোগীরা পরের দিনই চলে যেতে পারেন। অস্ত্রোপচার করা হলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতেও দেরি হয়। এই কমপ্লেক্স চালু করার পর রোগী জট কমে গেছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি প্রসূতি ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ১৩০টি। গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হয় ৮০ থেকে ১২০টি। এই ওয়ার্ডের প্রধান রোকেয়া খাতুন। তিনি বলেন, খিঁচুনি ও প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণজনিত কারণে এখনো মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খিঁচুনি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আর প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণজনিত রোগীরা মূলত বাইরে থেকে জটিলতা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে। তাঁদের অস্ত্রোপচার যদি এই হাসপাতালে হতো, তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো আরও কম হতো। সেই সঙ্গে গর্ভাবস্থায় মায়ের চিকিৎসা সেবার বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া গেলে মাতৃমৃত্যুর হার আরও কমবে। ঢাকায় প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হার ৩৩ শতাংশ আর খিঁচুনিতে ২৫ শতাংশ। রাজশাহীর অবস্থাও একই রকম।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকার কারণে এখানে অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মায়েরা বাড়তি চিকিৎসা সুবিধা পান। এ কারণে রাজশাহীতে মাতৃমৃত্যুর হারও কম।