রবীন্দ্রনাথের লেখনী আলোর পথ দেখায়: স্পিকার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে
ছবি: তৌহিদী হাসান

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, সবকিছুর পরে সত্য ও সুন্দর সব সময় বিরাজ করবে। এই বিশ্বাস কবি অন্তরে ধারণ করতেন। তাঁর এই বিশ্বাস আঁধার কেটে আলোর পথ দেখায়।

আজ রোববার বিকেলে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে ‘জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী এসব কথা বলেন।

কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে পৌঁছে পুকুরপাড়ে বকুল গাছের চারা রোপণ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী
ছবি: তৌহিদী হাসান

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় স্থানীয়ভাবে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কুঠিবাড়ি মুক্তমঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিকেলে কুঠিবাড়ি চত্বরে পৌঁছে পুকুরপাড়ে একটি বকুলগাছের চারা রোপণ করেন স্পিকার। এরপর মূল মঞ্চে যান। সেখানে প্রথমে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।

আলোচনা সভায় স্পিকার বলেন, প্রতিবছর রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী নতুনের বার্তা নিয়ে আসে, যা কালের আবর্তে কখনো মলিন হয় না। প্রাণে নিয়ে আসে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ও উচ্ছলতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন, রচনা করেছেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, যেটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে গান ও নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। নেতৃত্বে ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
ছবি: তৌহিদী হাসান

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাঙালির আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা প্রভৃতি স্থান রবীন্দ্র লেখনীতে খুঁজে পায়। বিশ্বায়নের এ যুগে যে সংকট, অশান্তি, যুদ্ধাবস্থা, সমাজের সব অনাচার-অবিচার দূরীকরণ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কবির কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ও শেখার আছে। কবির লেখনী থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন প্রজন্মকে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও বাঙালির শৈল্পিক অহংকার। প্রতিভা ও শ্রমের যুগলবন্দী সম্মিলনে তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, নাটক, শিশুসাহিত্য, জীবনী, শিক্ষাভাবনা ইত্যাদি সব শাখায় সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছেন। বাংলা সাহিত্যকে করেছেন ঐশ্বর্যমণ্ডিত। সংগীত ও চিত্রকলায়ও তাঁর অবদান অনন্য। নোবেল পুরস্কার এনে দিয়ে তিনি বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্বারকগ্রন্থের উন্মোচন করেন অতিথিরা। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে
ছবি: তৌহিদী হাসান

কে এম খালিদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে জাতির সংকট মোচনে এক মহামানবের আগমন প্রত্যাশা করেছিলেন। বাঙালি তথা উপমহাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সেই মহামানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাংসদ সেলিম আলতাফ। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর। স্মারক বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা। আলোচনা সভা শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিরা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনা উপভোগ করেন।