রশিয়া বেগমের ছেলের চিকিৎসার কী হবে

হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ ছেলে। অস্ত্রোপচারের জন্য লাগবে টাকা। সহায়সম্বল বেচে রশিয়া বেগম জোগাড় করেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। সেই টাকা নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার এই বাসিন্দা। পথে ডাকাতের কবলে পড়ে শুধু টাকা হারাননি, মারধরে আহত হয়ে নিজেও এখন হাসপাতালে। শয্যায় শুয়ে কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘আমার ছেলের চিকিৎসার কী হবে?’

রশিয়া বেগম (৪৫) ভোলাহাট উপজেলার খালে আলেমপুর গ্রামের মো. হুমায়নের স্ত্রী। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে মো. বাবু (৩০) পেশায় ট্রাকচালক। প্রায় আট মাস আগে এক দুর্ঘটনায় তাঁর পা ভেঙে যায়। রাজশাহীতে চিকিৎসা করিয়ে ঠিক হয়নি। তাই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় বাবুকে। সেখানে মঙ্গলবার তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল।

রশিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্রোপচারের জন্য দুই লাখ টাকা লাগবে। এ জন্য বাড়ির দুটি গরু, একটি পাওয়ার টিলার ও ১৬ মণ ধান বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জোগাড় করেন। বিক্রি করার মতো বাড়িতে আর কিছুই নেই। এত কষ্টের টাকা ডাকাতেরা ছিনিয়ে নেওয়ায় তিনি আর ছেলের চিকিৎসা করাতে পারবেন না।

আরও পড়ুন

সোমবার রাতে সাথী ট্রাভেলস নামের ঢাকাগামী বাসে রওনা দেন রশিয়া বেগম। পথে ওই গাড়িতে হানা দেয় ডাকাত দল। টাকার সঙ্গে রশিয়ার কানের সোনার দুলও নেয় ডাকাতেরা। এ সময় তাঁর কাঁধে ধারালো অস্ত্রের উল্টো দিক দিয়ে ১০-১২ বার আঘাত করে। এ ছাড়া ডান হাতেও আঘাত করেছে তারা। ডাকাতদের মারধরে আহত হয়ে তিনি এখন ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

মুঠোফোনে কথা হয় রশিয়া বেগমের ছেলে বাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকার ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে এক মাস আগে সিরিয়াল নেন। হঠাৎ সোমবার সকালে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, দ্রুত সেখানে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। মঙ্গলবার পরীক্ষার প্রতিবেদন চিকিৎসক দেখবেন। একজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করিয়েছেন।

বাবু অপেক্ষায় ছিলেন, মা রশিয়া বেগম টাকা নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবেন। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চিকিৎসককে দেখাবেন। তাঁর পায়ের অস্ত্রোপচার হবে। পা ঠিক হয়ে গেলে আবার গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে পারবেন। এক ঘটনায় সব আশা শেষ হওয়ার পথে।

ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ভোলাহাট-কানসাট সড়কের ফলিমারি বিল এলাকায় ওই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা ঢাকাগামী তিনটি বাস ও একটি ট্রাকসহ কয়েকটি যানবাহন আটকায়। যানবাহনের যাত্রী ও পরিবহনকর্মীদের মারধর করে টাকা, মুঠোফোন ও সোনার গয়না ছিনিয়ে নেয় তারা।

দুর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় ভোলাহাট থানায় মামলা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, মামলার বাদী হয়েছেন সাথী ট্রাভেলসের সুপারভাইজার মো. রফিক। তিনি অজ্ঞাতনামা মোট ১৫ জনকে আসামি করেছেন।