রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: উত্তরপত্র মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ১০ শিক্ষার্থীর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আমতলায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম ব্যাচের ১০ শিক্ষার্থী বিভাগীয় সভাপতির বিরুদ্ধে স্নাতকোত্তরের উত্তরপত্র মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। এর ফলে স্নাতকোত্তরে তাঁদের ‘ফল বিপর্যয়’ ঘটেছে বলে দাবি করেন শিক্ষার্থী।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আমতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে তদন্ত ও তাঁদের স্নাতকোত্তরের সব উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন।

তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সব কোর্সেই দুজন পরীক্ষক থাকেন। দুজনের মূল্যায়নে বড় পার্থক্য হলে তৃতীয় পরীক্ষকের ব্যবস্থা থাকে। তাই এখানে কারও একার পক্ষে ফলাফল প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। ২৯ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরে ফল খারাপ করার হতাশা থেকে এমন অভিযোগ করতে পারেন।

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বিভাগের প্রথম এই ব্যাচটির মোট ২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থী অনার্সের (স্নাতক) ফলে ৩ দশমিক ৫০ বা এর বেশি সিজিপিএ পেয়েছিলেন। এর মধ্যে অনার্সে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদেও প্রথম হয়ে অগ্রণী ব্যাংক স্বর্ণপদক লাভ করেন। দ্বিতীয় হওয়া শিক্ষার্থী ইউজিসি বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু স্নাতকোত্তরে ফলাফলে ২৯ জনের মধ্যে কেবল তিনজন শিক্ষার্থী ৩ দশমিক ৫০ বা এর বেশি সিজিপিএ পেয়েছেন। যার মধ্যে দুজন অনার্সেও ৩ দশমিক ৫০ বা এর বেশি সিজিপিএ পেয়েছিলেন। কিন্তু অনার্সে ২৯ জনে ২১তম হওয়া শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের ফলাফলে প্রথম হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মেনে সব একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এখানে কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
সৈয়দ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, সভাপতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিভাগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষপাতিত্ব ও প্রতিশোধপরায়ণতার কারণে তাঁদের স্নাতকোত্তরের ফলাফলে এমন ‘বিপর্যয়’ ঘটেছে। আর এতে কেবল সভাপতির ‘ঘনিষ্ঠ’ তিনজন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৫০ বা এর বেশি সিজিপিএ পেয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, বিভাগীয় সভাপতি স্নাতকোত্তরের নন-থিসিস গ্রুপের আটটি কোর্সের মধ্যে পাঁচটি এবং থিসিস গ্রুপের ছয়টি কোর্সের মধ্যে তিনটি কোর্সের পরীক্ষক ছিলেন। এই কোর্সগুলোতে তাঁদের ফল বেশি খারাপ হয়েছে। আবার নন-থিসিস গ্রুপে সভাপতি ও অপর এক শিক্ষকের চারটি কোর্সে কোনো ইন-কোর্স পরীক্ষা না নিয়েই মূল্যায়ন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৯ ডিসেম্বর ১০ জন শিক্ষার্থী ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবদুস সালাম বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এরপর ১০ ডিসেম্বর সহ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও ১৩ ডিসেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা আশ্বস্ত করেন, ফলাফলে কোনো রকমের অনিয়ম ঘটে থাকলে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান, শাকিরুল ইসলাম, মাহমুদা মিতুল, নাঈমা আক্তার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবুল হাসান, মোস্তাকিম খান ও সুলতান কবির উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে মেনে সব একাডেমিক কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এখানে কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগ দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে আসলে উপাচার্য বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের করণীয় কিছু নেই। তাঁরা হয়তো আবেগপ্রবণ হয়ে অভিযোগ করেছেন। কেননা তাঁদের অভিযোগ কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পরীক্ষকের বিরুদ্ধে নয়। তাঁদের অভিযোগের ধরনটি আমলে নিলে সব পরীক্ষক, প্রশ্নকর্তা—সবার বিরুদ্ধেই যায়। তাঁদের অভিযোগ তো সুনির্দিষ্ট কোনো ত্রুটির বিরুদ্ধে নয়।