রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য, স্ত্রী, মেয়েসহ পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব তলব

মেয়াদের শেষ দিনে কর্মস্থল ছাড়ছেন আবদুস সোবহান
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহান, তাঁর ছেলে ও মেয়ে, জামাতাসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের ব্যাংক হিসাব তলব করে তাঁদের লেনদেনের তথ্য সরবরাহে বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এনবিআরের এমন একটি চিঠির অনুলিপি প্রথম আলোর কাছে আসে। তবে চিঠিটি ইস্যু করা হয়েছে ২৪ মে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল থেকে। চিঠি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এই পাঁচ ব্যক্তির ব্যাংকের যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

ওই চিঠিতে মোট পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব তলবের কথা বলা হয়েছে। তাঁরা হলেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম আবদুস সোবহান, তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা সোবহান, ছেলে মুশফিক সোবহান, মেয়ে সানজানা সোবহান ও জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজ। এর মধ্যে মেয়ে সানজানা সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক ও জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) প্রভাষক।

ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, উপাচার্যসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যের একক বা যৌথ নামে অথবা তাঁদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের (ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান) নামে ব্যাংকে/প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত/রক্ষিত যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর, এসডিটি হিসাবসহ যেকোনো ধরনের বা নামের হিসাব), যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র , ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যেকোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হয়ে থাকলে ১ জুনের মধ্যে এনবিআরে পাঠাতে বলা হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪–এর ১১৩ (এ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এনবিআরের চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। তবে উল্লিখিত সময়ের আগেও যদি কোনো হিসাব থাকে, তা–ও সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এনবিআরের চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। তবে উল্লিখিত সময়ের আগেও যদি কোনো হিসাব থাকে, তা–ও সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের মে থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। গত ৬ মে বিতর্কিতভাবে তিনি বিদায় নেন। প্রথম মেয়াদেও (২০০৯-২০১৩) তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। মাঝে এক মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসেই তিনি বিদ্যমান নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন।

আবদুস সোবহান প্রশাসনের নিয়োগপ্রক্রিয়া ও অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করে প্রগতিশীল শিক্ষকদের ব্যানারে ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকসমাজ’। শিক্ষকদের এই সংগঠন ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে ওই বছরের ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ইউজিসি। পরে গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ স্থগিত করে দেয়।

আরও পড়ুন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগকে কেন্দ্র করে মহানগর ছাত্রলীগ ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সংঘর্ষ
ফাইল ছবি

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে আবদুস সোবহান বিদায়ের শেষ মুহূর্তে ১৩৮ জনকে অ্যাডহকে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিয়ে ৬ মে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিন এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে সেদিনই বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পেয়েছে। আবদুস সোবহানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এরই মধ্যে ২৪ মে এনবিআর ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য চিঠি দিয়েছে ব্যাংকগুলোতে।

আরও পড়ুন