রাজশাহীতে অপরাধ মোকাবিলায় ৪০০ কিশোরের তথ্যভান্ডার

ছেলেটির বয়স ১৪। পরিবারের অজান্তেই সে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। একদিন রাত নয়টার পর  সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অচেনা নম্বর থেকে মা-বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে ফোন আসে। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে বন্ধুর বাড়ি থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে। সে অসুস্থতার ভান করে। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান তার কিছুই হয়নি। পরে পুলিশ জানতে পারে, পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য ছেলেটি নিজেই অপহরণ নাটক সাজিয়েছিল।

এ ধরনের অপরাধ ও বিপথগামী হওয়া ঠেকাতে পুলিশ রাজশাহী নগরের প্রায় ৪০০ কিশোরের তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। পুলিশ জানায়, কিশোরেরা কখন কোথায় যাচ্ছে, তার নজরদারি করা হচ্ছে। একবার আটক হওয়ার পরে তারা ফের নতুন কোনো অপরাধে জড়ালে তথ্যভান্ডারের সাহায্যে তাদের আটক করা হবে। প্রথমবার আটক হওয়া কিশোরদের ধরে সংশোধনের জন্য তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। এসব কিশোরকে আইনি সচেতনতা ও মানবিক মূল্যবোধের বিষয়ে জাগ্রত করা হবে। শুধু শাস্তি নয়, এভাবে বিকল্প উপায়ে তাদের বিপথগামিতা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘রাজশাহীতে যোগদান করার পরই এখানে সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালু করেছি। এই ইউনিটের মাধ্যমে কিশোর অপরাধীদের শনাক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ৪০০ কিশোরকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে তাদের আইন বিষয়ে সচেতন করা হবে। তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই এই কাজ শুরু হবে। আপাতত কিশোরদের নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।’

৪০০ কিশোরকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে তাদের আইন বিষয়ে সচেতন করা হবে। তাদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই এই কাজ শুরু হবে। আপাতত কিশোরদের নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।
আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার

যেভাবে কিশোরেরা শনাক্ত হচ্ছে
রাজশাহী নগরের হাদির মোড় এলাকায় একদল কিশোরের বিরুদ্ধে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ এক কিশোরকে আটক করে। পরে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঘটনাটি পর্যালোচনা করে জানতে পারে সে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদের শনাক্ত করে। পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়। তাঁরা মুচলেকা দিয়ে নিয়ে নিজ নিজ সন্তানকে নিয়ে যান। এখন ওই কিশোরেরা পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

অনলাইন গেম পাবজির মাধ্যমে রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া এলাকার এক কিশোরের সঙ্গে অন্য এক কিশোরের পরিচয় হয়। তেরখাদিয়ার কিশোরটি অন্য কিশোরের ছোট বোনের সঙ্গে পরিচিত হয়। একপর্যায়ে কৌশলে মেয়েটির ফেসবুক আইডি ও ফোন নম্বর নেয়। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও আদান-প্রদান করতে থাকে। পরে সেই ছবি ও ভিডিও দিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। এ নিয়ে মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সাইবার ক্রাইম ইউনিট অনুসন্ধান করে জানতে পারে, ছেলেটি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। সাইবার ক্রাইম ইউনিট ওই কিশোর গ্যাংয়ের হাইটেক ডিভাইস থেকে ছবি ও ভিডিও উদ্ধার করে। এখন পুলিশ ওই কিশোরের চলাফেরার ওপরে নজরদারি করছে।

এ সম্পর্কে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, রাজশাহী মহানগরের বিভিন্ন থানায় যেসব কিশোর গ্যাং বা বাইক পার্টির সদস্য ধরা পড়ছে, তাদের নিয়ে তথ্যভান্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এই তথ্য ব্যবহার করে বিট পুলিশ কর্মকর্তারা কিশোরদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।