রাজশাহীতে নতুন বছরে মেসভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

রাজশাহীতে নতুন বছরে এসে মেসভাড়া বাড়িয়েছে বেশ কিছু ছাত্রাবাস। গত বছরের তুলনায় তারা এ বছর ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক দিনে রাজশাহীতে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা প্রথম আলোর কাছে এ ধরনের অনেকগুলো অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন।

অভিযোগকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনার মধ্যে আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা চলছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী রাজশাহীতে ফিরে মেসে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থীও কোচিং করতে এসে মেসে থাকছেন। আবার অনেকে লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহীতে মেসে থেকে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। করোনায় সবার পরিবার অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে রয়েছে। এ অবস্থায় মেসভাড়া বাড়ানো অমানবিক, অযৌক্তিক বলে মনে করছেন এসব শিক্ষার্থী।

রাজশাহী কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে রাজশাহী নগরের কুমারপাড়ায় একটি মেসে থাকছেন এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, তাঁর মেসে বর্ডার (মেসের বাসিন্দা) রয়েছেন ২০ জন। গত বছর এই মেসে থাকাকালে তিনি প্রতি মাসে ভাড়া দিতেন ১ হাজার ৩০০ টাকা করে। এবার জানুয়ারি থেকে মেসমালিক আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে ভাড়া দেড় হাজার টাকা করেছেন। তাঁরা এর প্রতিবাদ করেও কোনো ফল পাননি।

করোনায় সবার পরিবার অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে রয়েছে। এ অবস্থায় মেসভাড়া বাড়ানো অমানবিক, অযৌক্তিক বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

এই শিক্ষার্থী বলেন, করোনাকালে যেখানে মেসের ভাড়ায় ছাড় দেওয়া উচিত, সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে তাঁদের বিপদে ফেলা হচ্ছে। এই করোনাকালে চাকরিপ্রত্যাশী হিসেবে ২০০ টাকা বাঁচাতে পারলেও আরেকটি চাকরিতে আবেদনের ফি জোগাড় করা যায়। কিন্তু বাড়ির মালিক মেসের কিছু সংস্কারের নামে এই ভাড়া বাড়িয়েছেন। তাঁদের মেসমালিক জানিয়েছেন, আগামী মার্চ থেকে আরও ১০০ টাকা বৃদ্ধি করা হবে।

নগরের বোয়ালিয়া এলাকার একটি মেসের বাসিন্দা এক শিক্ষার্থী জানান, তাঁর ভাড়া এ মাসে ১৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তিনি ওই মেসে মাত্র কয়েক মাস হলো উঠেছেন। মেসের কোনো সিট খালি নেই যে সিট-সংকটের কথা বলা যাবে। এই অবস্থায় মেসভাড়া বাড়ানো অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে মেসমালিকদের ভাষ্য, করোনাকালে তাঁদের বিদ্যুৎ বিলসহ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ বা কমানো হয়নি। বর্তমানে মেসমালিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁরা নতুন বছরে মেসে সংস্কারকাজও করেছেন। এ কারণে তাঁরা খুব অল্প পরিমাণ অর্থ বৃদ্ধি করেছেন।

সমিতির বাইরের মেসগুলোর ভাড়া বৃদ্ধি করলে তাতে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের বলব এমন মেস ভাড়া নেন, যেটা সমিতির অন্তর্ভুক্ত।
এনায়েতুর রহমান, সভাপতি, রাজশাহী মহানগর মেসমালিক সমিতি

নগরের রইছ ছাত্রাবাসের মালিক রইছ উদ্দিন বলেন, ২০২১ সালে মেসের ভাড়া বাড়ানো হবে, এটা আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ৫০০ টাকা বাড়ানোর কথা ছিল, সেখানে মাত্র ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সেটাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বাড়ানো হয়েছে। রইছ উদ্দিনের দাবি, তিনি করোনার প্রকোপের সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মেসভাড়াই নেননি।

রাজশাহী নগরের ঘোড়ামারা এলাকার নূর মহল ছাত্রীনিবাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এই ছাত্রীনিবাসের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি ভাড়া সেই অর্থে বাড়াননি। অনেকের ভাড়া যেখানে ১ হাজার ৬৫০ টাকা ছিল, সেই ভাড়া ১ হাজার ৭০০ করেছেন শুধু। এ রকমভাবে খুব সামান্য টাকা বাড়িয়েছেন। তিনি এটি মেসমালিক সমিতিকে অবগত করেই করেছেন। শিক্ষার্থীরা এতে কোনো আপত্তি করেননি বলে দাবি করেন তিনি।

রাজশাহী মহানগর মেসমালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, তাঁরা নতুন বছরে কোনো ধরনের মেসভাড়া বৃদ্ধি করেননি। করোনাকালে মেসভাড়া বৃদ্ধি করা অমানবিক হবে। তাঁদের কাছেও শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। পরে তাঁরা ওই সব মেসে গিয়ে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করেছেন। এখন তাঁদের সমিতির বাইরের মেসগুলোর ভাড়া বৃদ্ধি করলে তাতে তাঁরা কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারছেন না। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পরামর্শ রাখেন, যেন এমন মেস ভাড়া নেন, যেটা সমিতির অন্তর্ভুক্ত। তাহলে সেখানে শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের সমস্যার ব্যাপারে তাঁরা কথা বলতে পারবেন।