রাজশাহীতে সন্ধ্যা নদী দখল করে মাছ চাষ

রাজশাহীর পুঠিয়ার নন্দনপুর গ্রামের বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীতে প্রবাহ তেমন নেই। কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল নদীর মধ্যে জালের ঘের দিয়ে আটকানো। তারপর একটু এগোতেই নদীটির চেহারা বোঝা গেল। ওই অংশেই মাছ চাষ করা হচ্ছে।

রাজশাহীর পুঠিয়ার নন্দনপুর গ্রামে সন্ধ্যা নদী দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার তোলা ছবিপ্রথম আলো

নদীর নাম সন্ধ্যা। দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। নাতিদীর্ঘ এ নদীতে বর্ষা মৌসুমেও নেই পানির প্রবাহ। দুই পাশ দখল হয়ে গেছে। গভীরতাও কম। এই নদীর গভীরতম অংশ নন্দনপুর এলাকায় দুই পাশে জালের মাধ্যমে ঘের দিয়ে চলছে মাছ চাষ। প্রায় দুই বছর ধরে প্রভাবশালীরা এই মাছ চাষ করছেন বলে অভিযোগ।


মৎস্যজীবীরা বলছেন, এই নদীতে মাছ ধরে এলাকার প্রায় অর্ধশত মৎস্যজীবী পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর গভীরতম অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারগুলো পড়েছে চরম বিপদে।

সন্ধ্যা নদী নারদ নদের একটি শাখা। এর উৎসমুখ পুঠিয়া উপজেলার রঘুরামপুর বাগিচাপাড়ায়। পুঠিয়ার শিবপুর বাজারের পাশ দিয়ে বাঁশপুকুরিয়া, নন্দনপুর হয়ে কান্তার বিলে পতিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পুঠিয়ার নন্দনপুর গ্রামের বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে প্রবাহ তেমন নেই। নদী ঘেঁষে পাকা ভবনও দেখা গেল। কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল নদীর মধ্যে জালের ঘের দিয়ে আটকানো। তারপর একটু এগোতেই নদীটির চেহারা বোঝা গেল। ওই অংশেই মাছ চাষ করা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় হাবিবুর রহমান নামের একজনের সঙ্গে। তিনি নিজেও মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি নিজেকে উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দাবি করেন, তাঁরা নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন না। নদীটি পরিষ্কার করে উপযোগী করে তাঁরা মাছ চাষ করছেন। নদীর ওই অংশ থেকে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ল সাইনবোর্ড। সেখানে লেখা, ‘মাছ চাষ চলছে, মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। বাস্তবায়নে: সন্ধ্যা নদী মৎস্য কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ। সহযোগিতায়: উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর, পুঠিয়া, রাজশাহী।’

এই সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, এই সমিতিতে থাকা তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতি করেন। গত বছর উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নন্দনপুরে পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেখানে তাঁরা অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। মৎস্য কর্মকর্তারা তাঁদের পরামর্শ দিলেন নদীটি পরিষ্কার করে মাছ চাষ করার জন্য। পরে তাঁরা সমিতির ২০ জনসহ প্রায় ৬০ জন লক্ষাধিক টাকা খরচ করে নদীর ওই অংশটি পরিষ্কার করে মাছ ছাড়েন। এ বিষয়ে তাঁরা লিখিত অনুমতি না পেলেও মৌখিকভাবে অনুমতি পেয়েছেন। মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে চলতি বছর তাঁরা ২০ সদস্যের একটি সমিতি করেন। এই সমিতির মাধ্যমেই মাছ চাষ চলছে।


এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর আলী বলেন, সরকারের ঘোষণা আছে, সাগর-নদী-জলাশয়ে মাছ চাষ করা যাবে। যেখানে পানি আছে, ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন করা যায়, সেখানে মাছ চাষ করার ব্যবস্থা করা তাঁদের বিভাগের কাজ। এই নদীটার পুরো অংশই কচুরিপানাতে ভরা। ওই অংশটা স্থানীয় কয়েকজন মিলে অনেক কষ্টে পরিষ্কার করে মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষ বিষয়ে তিনি তাঁদের শুধু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি অনুমতি দিতে পারেন না। অনুমতি দেবে উপজেলা প্রশাসন।

এই সমিতির সবাই আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতি করেন। গত বছর উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নন্দনপুরে পরিদর্শনে এসেছিলেন। মৎস্য কর্মকর্তারা তাঁদের পরামর্শ দিলেন নদীটি পরিষ্কার করে মাছ চাষ করার জন্য।
শরিফুল ইসলাম, সভাপতি, সন্ধ্যা নদী মৎস্য কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজ

এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওলিউজ্জামান বলেন, বছরখানেক আগে সম্ভবত উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তাঁরা (ইউএনও) সেখানে গিয়েছিলেন। পরে স্থানীয়দের উদ্ধুব্ধ করতে তাঁরা মৌখিকভাবে নদীর পানি প্রবাহ চালু রেখে কচুরিপানা পরিষ্কার করে মাছ চাষের অনুমতি দেন। তবে সেটা যেন সবাই মিলে করেন সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে তিনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখতে বলবেন। পরে আইন অনুযায়ী বিষয়টির সমাধান করা হবে।