রাজশাহীতে সালিসে বৈঠকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

চারঘাট উপজেলার শিবপুর ও পুঠিয়া উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ। ৯ জানুয়ারি দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর পুঠিয়া ও চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) ও দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ওই দুই উপজেলার দুই গ্রামের গত ১৫ দিনের বিবাদ মীমাংসা করতে শনিবার এক সালিসে বসেন।

সালিস চলার সময় দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। দুই গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে মারামারিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এই সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। পুঠিয়ার দিঘলকন্দি ও চারঘাটের শিবপুর গ্রামের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে দুই গ্রামের মাঝখানে চারঘাট উপজেলার শিশুতলা নামের স্থানে ওই সালিস বসে। এতে চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, ওসি জাহাঙ্গীর আলম, পুঠিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান জি এম হীরা বাচ্চু, ওসির দায়িত্বে থাকা পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খালেদুর রহমানসহ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সালিসে পর্যাপ্ত পুলিশও ছিল।

সংঘর্ষের সময় চারঘাটের শিবপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম (৫৫) মারা যান। এ সময় সালিসে উপস্থিত চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, চারঘাট থানার কনস্টেবল আপেলসহ পাঁচজন আহত হন। চারঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ জনকে আটক করে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে শিবপুর গ্রামের শান্ত নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে দিঘলকান্দি গ্রামের এক ব্যক্তির কথা–কাটাকাটি হয়। শান্ত চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা। এ নিয়ে দুই গ্রামের মানুষ বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এই বিবাদ মীমাংসার জন্য কয়েকবার দিন ধার্য করা হয়। পরে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে শনিবার দুই গ্রামের মাঝখানে শিশুতলা নামের স্থানে বেলা ১১টার দিকে সালিস বসে। বেলা দেড়টার দিকে সালিসে বহিরাগত মানুষ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করলে সালিস ভেঙে যায়। দুই গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য মাইকিং করা হয়। দুই গ্রামের লোকজন তখন দেশি অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালান। সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। মোটরসাইকেলটি কার, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একপর্যায়ে দিঘলকান্দি গ্রামের লোকজনের হামলায় রেজাউল গুরুতর আহত হন। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে বিকেল চারটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই গ্রামেই পর্যাপ্ত পরিমাণে রিজার্ভ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। রেজাউলের লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেই রয়েছে।

জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম বলেন, সালিস চলার সময় তিনি খেয়াল করেন, সালিসের মধ্যে বহিরাগত লোকজন ঢুকছেন। তাঁদের কাছে দেশি অস্ত্র ছিল। তিনি বলেন, এ অবস্থায় সালিস করা যায় না। বিষয়টি পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হীরা বাচ্চু বলতে গেলেই সালিস ভেঙে যায়। এরপর পুলিশ তাঁদের আটকের চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, দিঘলকান্দি গ্রামের হামলায় চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ আহত হয়েছেন।
পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হীরা বাচ্চু বলেন, দিঘলকান্দি গ্রামের লোকজন সব বিএনপি–জামায়াতের ছিল। অবস্থা বুঝেই তিনি ওই পরিবেশে আর সালিস করতে চাননি।

চারঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল থেকে জানান, কয়েক দিন ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় চারঘাট থানার আপেল নামের একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অনেকেই। কেউ মারা গিয়েছেন কি না, খোঁজ নিয়ে পরে বলতে পারবেন।