রাজশাহীতে ১৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে অটোরিকশার বর্ধিত ভাড়া ঘোষণা

রাজশাহী নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভরত অটোচালকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান। রাজশাহী নগর ভবনের সামনে, ৭ ফেব্রুয়ারি
ছবি: সংগৃহীত

ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে রাজশাহী নগর ভবনের সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) চালকেরা বিক্ষোভ করছিলেন। আজ রোববার বেলা একটার দিকে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকছিলেন। তাঁকে দেখে অটোরিকশার চালকেরা জয়বাংলা স্লোগান দিতে শুরু করলেন। তাঁরা বর্ধিত ভাড়া ঘোষণার দাবি জানালেন।

মেয়র বললেন, ‘আপনাদের নেতাদের ভেতরে পাঠান।’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের কোনো নেতা নেই।’ মেয়র বললেন, ‘আপনাদের ভেতর থেকে পাঁচজনকে পাঠান।’ তাতেও চালকেরা রাজি হলেন না। বললেন, ‘কেউ ভেতরে যাবে না। আপনি এখানেই ঘোষণা দেন।’ মেয়র হাসলেন। প্যানেল মেয়রের সঙ্গে কানে কানে একটু কথা বলে নিলেন। তারপর ঘোষণা দিলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্ধিত ভাড়া ঘোষণা করা হবে।
এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চালকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

আজ সকাল থেকে রাজশাহী নগরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকেরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। হঠাৎ পূর্বঘোষণা ছাড়াই এ ধর্মঘটের কারণে নগরবাসী কিছুটা দুর্ভোগের শিকার হন।

সকাল থেকেই রাস্তায় যাত্রী নিয়ে কোনো অটোরিকশা নামলেই তার ওপর চড়াও হন আরেক দল লোক। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সকাল থেকে হঠাৎ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স পরীক্ষা ছিল। এ কারণে অটোরিকশা বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে বিপাকে পড়েন।

এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক সমবায় সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ভাড়ার বর্ধিত হার ঘোষণা করা হয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে তারা সেই ভাড়া কার্যকর করে। পরে সিটি করপোরেশনের মেয়র বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন।

আজ এই সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটা তাঁদের কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়। একদল গাড়িচালক নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাঁরা তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি।

সকালে হঠাৎ দেখা যায়, নগরের রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। অটোরিকশা না পেয়ে অনেক যাত্রীকে ভ্যানে চেপে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। অনেকেই অটোরিকশার জন্য রাস্তার পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

সকাল ১০টায় সোহাগ রানা নামের এক ব্যক্তি নগরের হাদির মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বাজারে তাঁর বইয়ের দোকানে যাবেন। তিনি বলেন, রাস্তায় কোনো অটোরিকশা না দেখে তিনি অবাক হন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখেন, কোনো অটোরিকশা গলিপথ থেকে বের হলেই একদল লোক এসে যাত্রী নামিয়ে তাঁকে উল্টো দিকে ফিরিয়ে দেন। নগরের তালাইমারী, সাধুর মোড়, মোন্নাফের মোড়সহ পাশের সব এলাকাতেই একইভাবে যাত্রী নামিয়ে অটোরিকশা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স পরীক্ষা ছিল। একদল পরীক্ষার্থীকে দেখা যায়, তাঁরা কোনো যানবাহন না পেয়ে সবাই মিলে ভ্যানে চেপেছেন। আবার শহরের বাইরে থেকে আরেক দল পরীক্ষার্থী মিনিট্রাক ভাড়া করে আসছেন।

বেলা ১১টার পরে শ দেড়েক চালক ভাড়া বাড়ানো এবং সারাবেলা গাড়ি চালানোর দাবিতে ব্যানার নিয়ে রাজশাহী নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। অবস্থানকারীরা নগর ভবনের সামনের রাস্তার একটি লেন বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
বেলা একটার দিকে মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও প্যানেল মেয়র সরিফুল ইসলাম বাইরে থেকে নগর ভবনে ঢুকছিলেন। এই সময় চালকেরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তারপর মেয়রের ঘোষণার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন তাঁরা।

প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি ন্যায্য ভাড়া ঘোষণা করা হবে। এর আগেও হতে পারে। তাঁরা এর মধ্যে একটা বৈঠক করে নেবেন। তিনি বলেন, এই ধর্মঘটের দরকার ছিল না। এমনিতেই তাঁরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বর্ধিত ভাড়ার হার ঘোষণা করতেন।