রাজার বাড়ি পুকুরের নাম বদলে ‘কালেক্টর দিঘি’ সাইনবোর্ড
ব্রিটিশ আমলে রাজা সূর্য কুমার বেশ কিছু জনহিতকর কাজ করেন। বর্তমানে তিনটি পুকুরের অস্তিত্ব আছে।
রাজবাড়ী শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকা রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এখন আর বাড়িটির স্মৃতিচিহ্ন নেই। আছে শুধু তিনটি পুকুর। এর একটি রাজার পুকুরের নাম পরিবর্তন করেছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ‘কালেক্টর দিঘি’ নাম দিয়ে সেখানে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন পুকুরের আগের নাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীকোল গ্রামে রাজা সূর্য কুমার রায়ের বসতবাড়ি ছিল। এখনো এলাকাটি রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে রাজা উপাধি দেয় ব্রিটিশ সরকার। সূর্য কুমার পুকুর খননসহ বেশ কিছু জনহিতকর কাজ করেন। তাঁর বাড়িটির অস্তিত্ব নেই। শুধু তিনটি পুকুর আছে। একটি রাজার পুকুর, একটি রানির পুকুর ও আরেকটি বড় পুকুর নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের আগে পুকুরগুলো খাস হয়ে যায়। এরপর থেকে তা সরকারিভাবে দেখভাল করা হতো। পুকুরপাড়ের বটগাছতলায় মেলা বসত। তবে বছর দশেক ধরে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। রাজার উত্তরসূরিরা কেউ এখন আর রাজবাড়ীতে থাকেন না। গত ডিসেম্বরের শুরুতে রাজার বাড়ি পুকুরটির পাশে কালেক্টর দিঘি নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
রাজা সূর্য কুমারের নাতি সমীরেন্দ্র গুহ রায় ওরফে বেবী ঢাকায় থাকেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘তাঁর ঠাকুরদা পুকুরটি খনন করেছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে পুকুরটি খাস হয়ে যায়। সম্প্রতি শুনেছি পুকুরটির নাম বদলে দেওয়া হয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরটি আয়তাকার। আয়তন প্রায় এক একর। দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তর-পূর্ব কোণে চারপাশে বাঁধাই করা একটি বড় বটগাছ। রয়েছে দুটি পাকা করা ঘাটলা। এ ছাড়া বসার জন্য টাইলসে বাঁধাই করা বেঞ্চ রয়েছে। ঘাটলার নামফলকে লেখা, কাজের নাম: রাজবাড়ী পৌর এলাকায় রাজার বাড়ি পুকুরের ঘাটলার বেঞ্চ নির্মাণ। বরাদ্দের পরিমাণ: এক লাখ টাকা মাত্র। অর্থবছর ২০১৭-১৮। বাস্তবায়নে: জেলা পরিষদ।
পুকুরটির সঙ্গে ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। সবাই রাজার বাড়ি পুকুর নামে চেনেন। নামটি অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানাই।মো. নূরুজ্জামান শিক্ষক, রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ
পুকুরটির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে স্থানীয় অনেকেই আপত্তি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহন মোল্লা বলেন, রাজার বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে রাজা সূর্য কুমারের নাম অনুসারে। বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন শুধু পুকুর আছে। এখনো অনেক মানুষ রাজার বাড়ি দেখতে আসেন। তাঁরা পুকুরটা তো দেখতে পান। রাজার স্মৃতি হিসেবে আগের নামটাই থাকা উচিত।
একই কথা বলেন, রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক মো. নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পুকুরটির সঙ্গে ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। সবাই রাজার বাড়ি পুকুর নামে চেনেন। নামটি অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানাই।’
এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, পুকুরটি খাসজমিতে। ঐতিহ্যগতভাবে পুকুরটির কী নাম ছিল, তা যাচাই করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পুকুরের নাম নিয়ে যেসব কথা উঠেছে, তা সরকারি দপ্তরে কোথায়ও নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।