রাজেন্দ্র কলেজের রুকসু ভবন এখন জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়

ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সংসদ (রুকসু) ভবন এখন জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সংসদ ভবন ‘রুকসু ভবন’ এখন জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় হয়ে গেছে। জেলা ছাত্রলীগের নামে গত বৃহস্পতিবার সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে রুকসু ভবনের শীর্ষে। তাতে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখা’।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন থেকে ভবনটি তালাবদ্ধ করে দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার হঠাৎ কর্তৃপক্ষ ভবনের সামনের ফটকের তালা খুলে দেয়। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখা’ লেখা সাইন বোর্ডটি টাঙানো হয়।

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সবশেষ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। করোনার কারণে কলেজ বন্ধ করে দেওয়ায় ২০২০ ও ২০২১ সালে রুকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, রুকসুর নির্বাচন পরবর্তী বছর অনুষ্ঠিত না হলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায় রুকসুর কমিটি। সে হিসাবে বর্তমানে এই কলেজের ছাত্র সংসদ কার্যকর নেই।

১৯৮০ সালে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ সংসদের বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন লিয়াকত হোসেন। পরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্যও হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘রুকসু ভবন জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় হবে কেন? ওরা (ছাত্রলীগ) যা খুশি তা–ই কইরা বেড়াচ্ছে।’

১৯৯৪-৯৫ সালে রুকসুর সহসভাপতি ছিলেন (ভিপি) ছিলেন অনিমেষ রায়। তিনি ছাত্রলীগ প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অনিমেষ রায় বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। তিনি বলেন, রুকসু ও রাজেন্দ্র কলেজ সবার সম্পত্তি। এটি দলীয় কোনো সম্পত্তি নয়। রুকসু ভবন কোনো অবস্থানেই জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় হতে পারে না। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে তারা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ই ব্যবহার করতে পারে। কলেজের সংসদ ভবন দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করার মতো এ দৈন্য মেনে নেওয়া যায় না।

ছাত্রদলের প্রার্থী হিসেবে ২০০২-০৩ সালে এই কলেজ সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন বেনজীর আহমেদ। বেনজীর বর্তমানে ফরিদপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘রুকসু ভবন ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ব্যবহার করার জন্য। কলেজ খোলা থাকলে এ ভবন খোলা থাকার কথা, বন্ধ থাকলে বন্ধ থাকার কথা। গত বৃহস্পতিবার দেখলাম, জেলা ছাত্রলীগ রুকসু ভবন তাদের কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছে। রাত ১২টা, ১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের ছেলেরা সেখানে আড্ডা দিচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ভেঙে দেওয়া হয় জেলা কমিটি। গত ১৯ জানুয়ারি ২৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ কমিটির সভাপতি করা হয় তানজিদুল রশিদ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. ফাহিম আহমেদ।

জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় হিসেবে রুকসু ভবন দখল করা ভালো চোখে দেখছেন না খোদ জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দও। মিথুন কর্মকার রুকসুর ভিপি ছিলেন ২০১৭-১৮ সালে। বর্তমানে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি বলেন, রুকসু ভবনটি ছাত্রলীগ, ছাত্রদল কারওই সম্পত্তি নয়। ওই ভবনে ছাত্রলীগের কার্যালয় হতে পারে না। বিষয়টি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না। যারা কাজটি করেছে, তারা ভুল করেছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বরাবরই ওই ভবন (রুকসু) থেকে পরিচালিত হয়ে আসছিল। জেলা ছাত্রলীগের নির্দিষ্ট কোনো কার্যালয় নেই। এ জন্য স্যারকে (অধ্যক্ষ) বলে অনুমতি নিয়ে আমরা দলীয় কার্যালয় হিসেবে রুকসু ভবনটি ব্যবহার করছি। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে ভবনটি ব্যবহার করা শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রুকসু ভবনের শীর্ষে ছাত্রলীগের সাইন বোর্ড টাঙানোর সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমরা সেটি অপসারিত করে ফেলব।’

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোশার্রফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সালের জুন মাসে ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানের পর রুকসু ভবনটি তালাবন্ধ করে রাখা হয় পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামানের অনুরোধে। গত বুধবার পুলিশ সুপারের নির্দেশেই রুকসু ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই ভবনের শীর্ষে ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখা’ হিসেবে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে, এটি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে জানতে পেরেছেন। কাজটি ওরা (ছাত্রলীগ) ঠিক করেনি। এ ব্যাপারে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।