রাজৈরে ‘পথসভার’ নামে আ.লীগ প্রার্থীর ‘জনসভা’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত সভায় উপস্থিত মানুষের একাংশ। রোববার বিকেলে রাজৈর পৌর ঈদগাহ মাঠে
প্রথম আলো

মাদারীপুরের রাজৈর পৌর নির্বাচনে একটি ঈদগাহ মাঠে মঞ্চ সাজিয়ে সহস্রাধিক মানুষের অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সভা হয়েছে। আয়োজকেরা বলছেন, তাঁরা পথসভার আয়োজন করেছিলেন, যা জনসভায় রূপ নেয়। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।

পৌরসভার নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১১ ধারার (২) এর ‘ক’ অনুচ্ছেদ অনুযাযী, কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে পথসভা ও ঘরোয়া সভা ব্যতীত কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনী পথসভা করতে হয় পথের মধ্যে। কোনো মঞ্চ সাজিয়ে জনসভা করে নয়। এখানে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনী জনসভা করেছেন। কিন্তু তাঁরা কৌশলে মঞ্চের ব্যানারে লিখেছেন ‘নির্বাচনী পথসভা’। এখানে নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের কিছুই বলছেন না।

সরেজমিনে রাজৈর পৌর ঈদগাহ ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে রাজৈর পৌর নির্বাচনে ‘নির্বাচনী পথসভা’ আয়োজন করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠজুড়েই অন্তত তিন হাজার মানুষের সমাগম। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘নির্বাচনী পথসভা’ মঞ্চ। মঞ্চের সামনে হাজারো চেয়ারে বসে রয়েছেন সাধারণ জনগণ। করোনায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হলেও পথসভায় আসা অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক, ছিল না সামাজিক দূরত্ব।

পথসভায় প্রার্থীর পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত সভামঞ্চে উপস্থিত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। রোববার বিকেলে রাজৈর পৌর ঈদগাহ মাঠে।
প্রথম আলো

নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনের আচারণবিধি লঙ্ঘন করে আজ পথসভার নাম দিয়ে জনসভার আয়োজন করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু তারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।’

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পথসভার আয়োজন করেছিলেন, যা জনসভায় রূপান্তিত হয়ে যায়। তাঁরা প্রার্থীর পক্ষে আচরণবিধি মেনেই চলেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন, তাই মানুষের সমাগম বেড়েছে এ ছাড়া কিছু নয়। তা ছাড়া পথসভায় কাউকে দাওয়াত দিয়ে আনেননি। মানুষ যাঁর যাঁর ইচ্ছেমতো পথসভায় যোগ দেন।

রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা জনসভার আয়োজন করতে অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে তাঁরা জনসভার অনুমতি দেননি। তারপর তাঁরা পথসভার আয়োজন করেন। তাঁদের পথসভা ও জনসভার মধ্যে পার্থক্য রাখতে বলেছেন। তবে পথসভাটি জনসভায় রূপ নেয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রার্থী লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।