রাতভর ব্যথায় ছটফট করে সকালে বাজারেই সন্তান প্রসব, এগিয়ে আসেনি কেউ

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন প্রসূতি ও নবজাতক
ছবি: প্রথম আলো

মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী তিন-চার মাস ধরে ঘুরছিলেন রাজাপুর মাতবরের বাজারে। কেউ খেতে দিলে খেতেন। না দিলে অভুক্ত থাকতেন। অধিকাংশ রাতে ওই বাজারে ছাউনির নিচে ঘুমাতেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তাঁর প্রসববেদনা ওঠে। ব্যথায় কাতরালেও সারা রাত কেউ এগিয়ে আসেনি। আজ সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ সন্তান প্রসবের পর জ্ঞান হারান তিনি।

অবশেষে এগিয়ে আসেন রেনু বালা নামের স্থানীয় এক নারী। তিনি নবজাতক ও প্রসূতিকে উদ্ধার করে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে খবর পৌঁছায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা প্রশাসনের কাছে। অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে কালিশুরী ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মাতবরের বাজার থেকে মা ও শিশুকে নেওয়া হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন ঠিকভাবে নাম-ঠিকানা বলতে না পারা এই নারী। বয়স আনুমানিক ৩২ বছর।

আজ বেলা আড়াইটায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতককে পাশে নিয়ে শুয়ে আছেন ওই নারী। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এ এস এম সায়েম ওই নারী ও তাঁর শিশুকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসক সায়েম বলেন, নবজাতক ও তাঁর মা আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। জ্ঞান ফিরেছে। তবে ওই নারীর রক্তশূন্যতা রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

একপর্যায়ে ওই নারীও কথা বলছিলেন। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর নাম আফরোজা। ঠিকানা জানতে চাইলে একবার বলেন, বানারীপাড়া। আরেকবার বলেন, গলাচিপা উত্তর নলুয়া গ্রামে। স্বামীর নাম শাহিন।

চিকিৎসক সায়েম বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়ে নবজাতক এবং ওই নারীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। আশা করছি, সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনারা (সাংবাদিক) পত্রিকায় লিখলে ওই নারীর আপনজনের নজরে পড়তে পারে। তাহলে মাথা গোঁজার ঠাই পাবে নবজাতক ও তার মা।’

ওই নারীকে উদ্ধারকারী রেনু বালা বলেন, ওই নারীর বিপদে কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি যখন যান, তখনো মায়ের সঙ্গে শিশুটির নাড়ির বন্ধন ছিন্ন হয়নি। নবজাতক চিৎকার করে কাঁদছে। আর ওই নারী তখন অচেতন অবস্থায় পাশে পড়ে ছিলেন। তখন তিনি তাঁদের উদ্ধার করে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। পরে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স যায় এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। নবজাতক ও তার মায়ের সুস্থতা কামনা করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, স্থানীয় সংবাদকর্মী এম এ বাশারের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মাধ্যমে তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যথাসময়ে খবর পেয়ে উদ্ধার করতে না পারলে হয়তো নবজাতক ও তার মাকে বাঁচানো যেত না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, গুরুত্ব সহকারে নবজাতক ও তার মাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নবজাতক ও মা দুজনই আশঙ্কামুক্ত।