রাবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দ্রুত তদন্ত চায় ছাত্র ফেডারেশন

এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত তদন্ত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে, ২৭ আগস্ট
প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগীতের উপপরিচালক রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত তদন্ত চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। এ দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এর আগে ২৫ আগস্ট সংগঠনটি গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানায়।

মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জিন্নাত আরা, মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াসিন আরাফাত, রাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন।

বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত ১০-১২ বছরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ ধরনের ঘটনা তদন্তে বারবার কালক্ষেপণ করা হয়। যার কারণে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী দুজনই একটা ধোঁয়াশার মধ্যে থাকেন। আবার এ ধরনের ঘটনা বাড়লেও বিচার না হওয়ায় ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগও করেন না। তাই সংগীতের উপপরিচালক রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে এসেছে, তা তদন্তে যেন কালক্ষেপণ না করা হয়। দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধী সাব্যস্ত হলে, তাঁকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

ওই ছাত্রী বর্তমানে ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর মা–বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ২৩ আগস্ট দুপুরে রকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এতে বলা হয়, রকিবুল হাসানের কাছে গান শিখতেন ওই ছাত্রী। ২০১০ সালের ঘটনা। তাঁর বয়স তখন ১২ বছর। তখন রকিবুলের হাতে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। তাঁকে বারবার ভয় দেখিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। একাধিকবার তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। তখন ন্যায়-অন্যায় বোঝার জ্ঞান যেমন ছিল না, তেমনি অকপটে বলার সাহসও ছিল না। কোনো সামাজিক সমর্থন না পাওয়ার আশঙ্কায় তিনি একদম চুপ হয়ে যান। এতে মানসিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পড়াশোনা, সামাজিক জীবন ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো সেই ঘটনা তাঁকে যন্ত্রণা দেয়।

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রকিবুল হাসান। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ছোটকাল থেকে দীর্ঘদিন তাঁকে গান শিখিয়েছেন তিনি। এ ধরনের অভিযোগ তখন তোলেনি কেউ। আজ এত বছর পর কেন? এ ঘটনায় তিনি ২৩ আগস্ট নগরের মতিহার থানায় একটি জিডি করেছেন। এতে বলেছেন, শুধু সাংগঠনিক দ্বন্দ্বের কারণে ওই ছাত্রীর বাবা তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটনা করে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের সভাপতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজিনা লাজ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শুনেছেন ২৩ আগস্ট ভুক্তভোগীর মা-বাবা এসে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তবে আজ পর্যন্ত তাঁর কাছে প্রশাসন থেকে অভিযোগের কাগজ আসেনি। সেটি এলেই তাঁরা তদন্তকাজ শুরু করে দেবেন।