রামুতে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সত্যপ্রিয় পাঠাগার

কক্সবাজারের ‘রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার’ এর পাঠাগারে পড়াশোনা করছে পাঠকেরা
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের রামুর প্রাণকেন্দ্র মেরংলোয়া গ্রাম। এই গ্রামে আছে প্রাচীন বৌদ্ধবিহার ‘রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার’। বিহারের পাঠাগারে সংরক্ষিত ছিল হাজার বছরের পুরোনো পুঁথিপত্র, বিভিন্ন ভাষার ত্রিপিটক ও ধর্মীয় গ্রন্থ, গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকীসহ অন্তত পাঁচ হাজার বই। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে এই বিহারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে পুড়ে ছাই হয় পাঠাগারসহ পুরো বিহারটি।

ঘটনার এক বছরের মাথায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকার প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ধংসস্তূপের ওপর দৃষ্টিনন্দন ১৯টি বিহার নির্মাণ করে দেয়। এর একটি সীমা মহাবিহার। বৌদ্ধ সম্প্রদায় নতুন সীমাবিহার পেলেও সেখানে জ্ঞানচর্চার জন্য ছিল না কোনো পাঠাগার। স্থানীয়ভাবে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হলে এগিয়ে আসে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সীমাবিহারের তৃতীয় তলায় ৫০০ বর্গফুট আয়তনের একটি কক্ষে গড়ে তোলা হয় পাঠাগারটি। সেখানে অন্তত ৩০ হাজার বই রাখার উপযোগী একাধিক তাক এবং অন্তত ৪০ জন বসে পড়ার মতো টেবিল-চেয়ার যুক্ত করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে পাঠাগারে স্থাপন করা হয় চারটি কম্পিউটার।

২০১৪ সালের ৭ মার্চ বিকেলে পাঠাগারের উদ্বোধন করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সীমাবিহারের অধ্যক্ষ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের, প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আজিজ খান, বার্জার পেইন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী প্রমুখ।

সম্প্রতি পাঠাগারে গিয়ে দেখা যায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তত ৩৫ জন ছেলেমেয়ে বই পড়ছেন। কেউ কেউ বই থেকে খাতায় নোট নিচ্ছেন। টেবিলের মধ্যম সারিতে বসে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ ‘বাংলাপিডিয়া’ পড়ছিল কিশোরী পূর্ণা বড়ুয়া তিথি। সে বলল, অজানাকে জানার জন্য সে পড়ছে। বিহারের পাশে তিথির বাড়ি হলেও সে পড়ছে ২৫ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে।

তিথির উল্টো পাশে পাঠাগারের টেবিলে বসে লে. জেনারেল মনজুর রশীদ খানের ‘সৈনিক জীবন’ বইটি পড়ছিল কিশোর আদিত্য বড়ুয়া। ভবিষ্যতে সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায়।

কক্সবাজারের রামুর সীমা মহাবিহার
ছবি: প্রথম আলো

অতন্দ্রিলা বড়ুয়া রিয়া নামের এক তরুণী প্রায় প্রতিদিন পাঠাগারে এসে বই পড়েন। সংগ্রহ করেন নানা তথ্য। তিনি কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি বললেন, ‘দুর্বৃত্তের হামলায় সীমাবিহার ধ্বংস হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর আমরা কোনো বই পড়তে পারিনি। এখন প্রথম আলো ট্রাস্টের পাঠাগারে এসে সব ধরনের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। এলাকার ছেলেমেয়েরা জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাচ্ছে।’

পাঠাগারে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের করোনা বিষয়ে সচেতন করছিলেন সীমা মহাবিহারের আবাসিক পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় বছরে অন্তত আট হাজার শিক্ষার্থী এই পাঠাগারে এসে বই-পুস্তক পড়েছে। নিচ্ছে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা রাখছে পাঠাগারটি। এ জন্য বৌদ্ধসমাজ প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞ।

করোনা মহামারি শুরু হলে পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে যায়। টানা দেড় বছর পর গত ১৯ আগস্ট থেকে পাঠাগারটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে পাঠাগারটি।