রাস্তায় পড়ে ছিল দুই লাখ টাকা, ভ্যানচালক পেয়ে জমা দিলেন থানায়

দিনাজপুরের হাকিমপুর থানায় পুলিশের হাত থেকে হারিয়ে যাওয়া টাকা ফেরত নিচ্ছেন আবুল বাশার। বুধবার দুপুরে
প্রথম আলো

ব্যাগের মধ্যে ১৪ লাখ টাকা। রিকশায় চেপে ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবুল বাশার। কখন যে ব্যাগের চেইন অর্ধেক খুলে ছিল, তা খেয়াল করেননি তিনি। পথে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল পড়ে যায়। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে আবুল বাশার দেখেন, দুই লাখ টাকা নেই। ব্যাগের চেইন খোলা দেখে বোঝেন, রাস্তায় কোথাও টাকার বান্ডিল পড়ে যেতে পারে।

শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। পরে জানতে পারেন, হারিয়ে যাওয়া টাকার বান্ডিল দুটি এক রিকশাচালক পেয়েছেন এবং থানায় জমা দিয়েছেন। থানায় যোগাযোগ করে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে টাকা ফেরত পেয়েছেন আবুল বাশার।

আজ বুধবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড় এলাকার ঘটনা এটি। আবুল বাশারের বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামে।

টাকার মালিকের খোঁজ না পেয়ে স্থানীয় এক দোকানদারের সহযোগিতায় হাকিমপুর থানায় ফোন করেন ভ্যানচালক হাফিজুল ইসলাম (৬০)। পরে থানার উপপরিদর্শক বেলাল হোসেনের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন তিনি।

হাকিমপুর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে চারমাথা মোড় দিয়ে ভ্যান নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় টাকার বান্ডিল দুটি পড়ে থাকতে দেখেন ভ্যানচালক হাফিজুল ইসলাম (৬০)। ভ্যান থামিয়ে টাকার বান্ডিল তুলে নেন। একটুখানি পেছনে এসে রাস্তার পাশের দোকানিদের জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, কারও টাকা হারিয়েছে কি না। কেউ হারিয়ে যাওয়া টাকার সন্ধান করতে এসেছিলেন কি না। টাকার মালিকের খোঁজ না পেয়ে স্থানীয় এক দোকানদারের সহযোগিতায় হাকিমপুর থানায় ফোন করেন। পরে থানার উপপরিদর্শক বেলাল হোসেনের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন তিনি।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাশার শামীম বলেন, ‘রাস্তায় টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার বিষয়টি লিখে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। পরে টাকার মালিক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। উপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের উপস্থিতিতে টাকাটা মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ভ্যানচালক হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এত টাকা কী করব? আমি তো ভালোই আছি। টাকা পাওয়ামাত্র মালিককে খুঁজছি। মালিক না পেয়ে থানায় জমা দিছি।’

এদিকে টাকার মালিক আবুল বাশার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাগের চেইনটা একটু ছেঁড়া ছিল। রিকশায় যাচ্ছিলাম। ঝাঁকুনিতে কোনো একসময় টাকাটা পড়ে যায়। পরে জানতে পারি, এক ভ্যানচালক টাকাটা পেয়ে থানায় জমা দিয়েছেন। থানায় যোগাযোগ করে টাকা ফেরত পেয়েছি। ভ্যানচালক হাফিজুলকে সম্মানী দিতে গেলে তিনি নিচ্ছিলেন না। পরে জোরাজুরি করে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘হাফিজুল ইসলামের মতো সৎ মানুষেরা আছেন বলেই আমরা ভালো আছি।’