রায়ে হতাশ পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা

মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা আয়নুল হক হত্যা মামলার রায়ে হতাশ হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতা–কর্মীরা। বনপাড়ায় দলীয় কার্যালয়, নাটোর, ২৪ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলো

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আয়নুল হক হত্যা মামলার রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যসহ রাজনৈতিক সহকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বনপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই হতাশার কথা জানান।
গত সোমবার নাটোরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত এ মামলায় চার আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তাঁদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে মারা যাওয়ায় বাকি দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাকি ১৩ জন আসামিকে খালাস দেন আদালত। খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন।

তবে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাসুদ হাসান মনে করেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন ছিল না। কারণ, নিহতের পরিবার রায়ে সংক্ষুব্ধ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। সেখানে আমরা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন আয়নুল হকের বড় ছেলে ও বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ২০০২ সালের ২৮ মার্চ রাত পৌনে নয়টার দিকে বনপাড়া শহরে প্রকাশ্যে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করে বিএনপি নেতা একরামুল আলমসহ বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বাবাকে উদ্ধার করে তাঁরা তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরের দিন তিনি মারা যান। তাঁর লাশ দাফনে বাধা দেওয়া হয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম না জানিয়ে পুলিশ পাহারায় দাফন করা হয়। ছেলেদেরও দাফনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এ ঘটনার পর শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বনপাড়ায় এসে শোকসভা করেন এবং নিহতের বাড়িতে যান। এ ঘটনায় তাঁর পুত্রবধূ নাজমা বেগম বাদী হয়ে ১৭ বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর পর গত সোমবার এ মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলেও বাকি আসামিদের খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ে তাঁরা হতাশ ও বিস্মিত হয়েছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে গতকাল বুধবার ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে।

কে এম জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। একই সঙ্গে আশা করছি, উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় নাকচ করে খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাজা নিশ্চিত করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচার পাইনি। ন্যায়বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে যাচ্ছি। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যা যা করার তা–ই করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আয়নুল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক, আয়নুল হকের জামাতা আবদুর রাজ্জাক মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের ব্যাপারী, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।