রিমান্ড শেষে কারাগারে রুহুল, মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং শ্রমিকনেতা রুহুল আমিন, কার্টুনিস্ট কিশোর ও সাত ছাত্রনেতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন। আজ সোমবার খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং রুহুল আমিন, কার্টুনিস্ট কিশোর ও সাত ছাত্রনেতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। রুহুল আমিন ওই পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। ওই সংগঠনের ব্যানারেই তিনি শ্রমিকদের নিয়ে পাটকল আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফেসবুক স্ট্যাটাস বা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সবই অজুহাতমাত্র। মূলত রুহুল আমিন কয়েক বছর ধরে সারা দেশের পাটকল ও চিনিকলের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে যেভাবে আন্দোলনকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন, সেটাই সরকারের মাথাব্যথার মূল কারণ। অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কালাকানুন বাতিল করে বাংলাদেশের পাটকল রক্ষা আন্দোলনের নেতা রুহুল আমিনকে মুক্তি না দেওয়া হলে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তাঁরা।

এ সময় বক্তারা আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিছু বলতে গেলেই সরকার ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় ওই আইনে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাসের মতো কারাগারে থাকার পর কারাগারেই মারা গেছেন মুশতাক আহমেদ। কিশোরের অবস্থাও ভালো নয়। আবার এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে একই আইনে মামলার শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন। তাঁরা অবিলম্বে রুহুল আমিনের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন।

দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ সোমবার রুহুল আমিনকে খুলনা আদালতে হাজির করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

পাটকল শ্রমিকনেতা আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বিশ্বাস, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের খুলনা জেলা সভাপতি হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ লেখক শিবির খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক বরকত আলী, চলচ্চিত্র নির্মাতা মিহির কান্তি মণ্ডল, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের নেতা আলমগীর হোসেন, মোশারফ হোসেন, মাতঙ্গী নাট্যদলের এইচ আর জয়ন্ত প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদকে নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট করেছিলেন রুহুল আমিন। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে খুলনা নগরের খালিশপুর থানার গোয়ালখালী এলাকার এক ভাড়া বাসা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। রাতেই তাঁর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন খুলনা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মো. নাহিদ হাসান। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ফেসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তথা সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করাসহ বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার এবং জনগণের মধ্যে শত্রুতা, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোশারেফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ড শেষে রুহুল আমিনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।