রূপগঞ্জে উচ্চ আদলতের নির্দেশেও বন্ধ হয়নি বালু ফেলে জমি ভরাট

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ভূমিদস্যু চক্রের বালু ফেল জমি ভরাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। আজ রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে।
ছবি: প্রথম আলো

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মেনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ১৩টি মৌজার সাড়ে সাত হাজার বিঘা জমি বালু দিয়ে ভরাট ও দখলের অভিযোগ উঠেছে।

আজ রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি অফিসে ‘কায়েতপাড়া ভূমিদস্যু প্রতিরোধ আন্দোলন’র ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও কৃষকেরা এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কায়েতপাড়া ভূমিদস্যু প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক মঈন উদ্দিন আহমেদ মানিক। এ সময় সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, কমিউনিস্ট পার্টির জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বাসদের সংগঠক আবু নাঈম খান বিপ্লব উপস্থিত ছিলেন।

রিটকারী জমির মালিক মঈনউদ্দিন আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়নে দুই লাখ মানুষ পরিবার–পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। ওই ইউনিয়নের ৮০ ভাগ কৃষিজমি। কৃষিকাজ করে ওই এলাকার লোকজন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পের নামে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৩টি মৌজায় সাড়ে সাত হাজার বিঘা জমি অবৈধভাবে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। ৪২টি ড্রেজার দিয়ে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে বালু ভরাট করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কৃষকের তিন ফসলি জমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভরাট, জলাশয় ও কৃষিজমি ভরাট করা যাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই নিদের্শনা না মেনে প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্যুরা বালু ভরাট ও জমি দখল করছে। বালু ভরাট বন্ধে জমি মালিকেরা উচ্চ আদালতে পৃথক তিনটি রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বালু ভরাটের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। চলতি মাসেও উচ্চ আদালত আরও তিন মাসের স্থিতিবস্থা বর্ধিত করেছেন। কিন্তু স্থিতিবস্থা চলাকালীন আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমি ভরাট চলছে।

মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, জমি ভরাট বন্ধে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি। তাঁদের করা একটি রিটের বিপরীতে আদালত গত বছরের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন কালক্ষেপণ করছে। অবিলম্বে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মঈনউদ্দিন বলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, তাঁর ভাই জেলা পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান এই জমি দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

রফিউর রাব্বি বলেন, জমি দখলের এই চিত্র পুরো দেশের। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাড়ে সাত হাজার বিঘা জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই, প্রশাসন যে আছে, সেটার কোনো প্রমাণ নেই। প্রশাসন থাকলে এভাবে লুটপাট চলতে পারে না। জেলা প্রশাসন যখন এভাবে নিশ্চুপ থাকে, তখন বোঝা যায় তারা দখলদারদের পাহারাদার হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘দখলদাররা উচ্চ আদলতেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। আমরা চাই সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে জেলা প্রশাসন সেখানকার সঠিক তথ্যটুকু উচ্চ আদালতে দাখিল করবে। সেই রিপোর্ট কোনোভাবেই যেন ভূমিদস্যু ও লুটেরাদের পক্ষে না যায়।’

অভিযোগের বিষয়ে কায়েতপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের জমি ভরাট করছি। অন্য কারও জমি ভরাট করছি না। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানি না।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দু–তিন দিন আগে তাঁরা তদন্ত প্রতিবেদন সুপারিশসহ জমা দিয়েছেন। সেটি শুনানির অপেক্ষায় আছে।