রেলওয়ে ওভারপাস: সাড়ে তিন বছরে হয়েছে ১২ শতাংশ কাজ

সাড়ে তিন বছর ধরে জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের রেলগেটপাড় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। এখনো ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়নি। সাম্প্রতিক ছবিপ্রথম আলো

জামালপুর শহরের প্রধান সড়কে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলছে সাড়ে তিন বছর ধরে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ একবার শেষ হয়েছিল। পরে সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এ সময়ে মাত্র ১২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বছরের পর বছর নির্মাণকাজ চলায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্থানীয় লোকজন।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের গেটপাড় থেকে ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে চারটি পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। দুটি পিলারের মাঝখানে গার্ডার নির্মাণ চলছে। সেখানে বেশি শ্রমিক নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে। প্রধান সড়কটি ভাঙাচোরা। নির্মাণকাজের জন্য আশপাশে যানজট। ওভারপাস নির্মাণের জায়গা রেখে দুই পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে খুব ধীরগতিতে। এ অবস্থায় সড়কের মধ্যে বালি, পাথর, ইট রাখা হয়েছে। কিছু দূর পরপর কাদাপানি জমে রয়েছে। লম্বাগাছ এলাকায় বেশি পানি। এ অবস্থায় সেখান দিয়ে হাঁটাও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

জামালপুরের সম্মিলিত ব্যবসায়ী জনতা ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ বলেন, এই কয়েক বছরে মাত্র চারটি পিলার করেছে। তাহলে পুরো কাজ করতে, তাদের কত বছর লাগবে?

২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে তমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জামিল ইকবাল ও মেসার্স মইন উদ্দিন বাঁশি যৌথভাবে কাজটি শুরু করে। ২০২০ সালের জুনে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কাজ ঢিমেতালে চলছে। জাহেদা শফির মহিলা কলেজের সামনে থেকে লম্বাগাছ পর্যন্ত সড়ক বেহাল। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। সেই পানি আর নেমে যাওয়ার রাস্তা নেই। সব সময় যানজট লেগেই থাকে। এ জন্য তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাজের গতি বাড়ানোর দাবিতে গত রোববার তাঁরা মানববন্ধন করেন। ঠিকাদারের চরম গাফিলতি ও ওভারপাস নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিয়র রহমান বলেন, লম্বাগাছ থেকে গেটপাড় পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। নির্মাণকাজের জন্য সব ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই এ এলাকায় কোমরসমান পানি জমে যায়। পানি সাত দিনেও সরে না। এ এলাকায় ক্রেতা আসতে চান না।

সওজ জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ট্রেন চলাচলের কারণে জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের রেলগেট পাড় এলাকায় নিত্যদিন যানজট লাগে। জনদুর্ভোগ দূর করার জন্য সওজ সড়ক প্রশস্তকরণ ও রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। ৭৮০ মিটার ওভারপাসসহ দুই পাশে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হবে। এতে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে তমা কনস্ট্রাকশন, মেসার্স জামিল ইকবাল ও মেসার্স মইন উদ্দিন বাঁশি যৌথভাবে কাজটি শুরু করে। ২০২০ সালের জুনে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক রবিউল আলম বলেন, ‘কাজে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। সওজ এখনো কাজের জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এরপরও যেখানে জায়গা ছিল, সেখানে কাজ করা হচ্ছে। ফলে পুরোদমে কাজ করা যাচ্ছে না।’

কাজে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। সওজ এখনো কাজের জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারেনি। এরপরও যেখানে জায়গা ছিল, সেখানে কাজ করা হচ্ছে। ফলে পুরোদমে কাজ করা যাচ্ছে না।
রবিউল আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় তত্ত্বাবধায়ক

জামালপুরের সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাজে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। তবে সেটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি নয়। ওভারপাস নির্মাণের কিছু অংশে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জমি বুঝে না পাওয়ায় সেখানে কাজ করা যাচ্ছে না। ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটির সমাধান হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।