রেশমগুটি চাষে ঘুরে দাঁড়ানো বিমলারা

উপজেলার বড়হড় গ্রামে ৩১ নারী রেশমগুটি চাষ করেন। তাঁদের উৎপাদিত রেশমগুটি কিনে নেয় রেশম উন্নয়ন বোর্ড।

বিমলা রানী

স্বামী চিত্তরঞ্জন বর্মণের মৃত্যুর পর কৃষিকাজে নামতে হয়েছিল বিমলা রানীকেই। সংসার চালাতে কখনো রাস্তায় মাটিও কেটেছেন। চার বছর আগে গ্রামের কয়েকজনের পরামর্শে রেশমগুটির চাষ শুরু করেছিলেন। এখন এ আয় দিয়েই চারজনের সংসার চালাচ্ছেন বিমলা।

বিমলার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়হড় গ্রামে। ওই গ্রামে তাঁর মতো ৩১ নারী রেশমগুটি চাষ করেন। তাঁদের উৎপাদিত রেশমগুটি কিনে নেয় রেশম উন্নয়ন বোর্ড।

তুলা উৎপাদনে আগে থেকেই গাজীপুরের কাপাসিয়ার সুনাম রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ১৭ বছর আগে বড়হড় গ্রামে খালের দুই পাশে পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে লাগানো হয়েছিল তুঁতগাছ। এসব গাছের পাতাগুলো রেশম পোকার খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তখন ওই গ্রামের বেশির ভাগ নারী সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। পরে রেশম বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নারীদের রেশম চাষে যুক্ত করা হয়। এখন তাঁরা প্রতিবছর ভালোই করছেন। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে রেশমচাষির সংখ্যা। প্রথম দিকে বিনা মূল্যে রেশম লার্ভা দেওয়া হতো রেশম বোর্ডের প্রকল্প কার্যালয় থেকে। এরপর স্বল্পমূল্যে লার্ভা সংগ্রহ করেন তাঁরা।

রেশমচাষি বিমলা রানী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে তাঁরা উৎপাদিত রেশমগুটি ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারেন। কিছুদিন আগে তিনি ১৪ কেজি রেশমগুটি বিক্রি করেছেন। এবার অবশ্য দাম কিছুটা কম পেয়েছেন। তিনি জানান, বছরে চারবার রেশম চাষ করা যায়। প্রতিবার তিনি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। ডিম থেকে গুটি হওয়া ও বিক্রি পর্যন্ত ২৭ দিন‌ সময় লাগে। রেশম পোকার খাবার হিসেবে তুঁতপাতা প্রায় প্রতিদিনই দিতে হয়।

আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের (ঢাকা) উপপরিচালক আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, কাপাসিয়ায় ৩১ রেশমচাষি আছেন। তাঁদের উন্নত রেশমগুটি তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রেশম পোকার খাবারের জন্য তুঁতগাছও বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, প্রতিবছরই তাঁরা নতুন নতুন উদ্যোক্তা পাচ্ছেন। চাষিরা যেন রেশমগুটি বিক্রিতে ন্যায্যমূল্য পান, সে বিষয় নিয়েও তাঁরা কাজ করছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতিবছর এক থেকে দেড় শটি তুঁতগাছের চারা রেশমচাষিদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। বাড়ির আশপাশে বা খালের পাড়ে তাঁরা তুঁতগাছগুলো ছাড়াও তাঁরা বাড়ির আশপাশে এগুলো রোপণ করেছেন। একেকটি তুঁতগাছ ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বাড়িতেই বাঁশের ডালায় তাঁরা রেশম পোকার চাষ করেন। ডিম সংগ্রহ করে চাষের শুরু হয়। ডিম থেকে পাখা গজিয়ে প্রজাপতি হওয়া পর্যন্ত সেগুলোকে খাবার হিসেবে প্রতিদিন তুঁতগাছের পাতা দিতে হয়। প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাওয়ার আগেই রেশমের গুটি সংগ্রহ করতে হয়। রেশমের গুটিগুলোও তাঁরা রেশম বোর্ডের কাছেই বিক্রি করেন।

রেশমচাষি রিতা রানী জানান, এ গ্রামের নারীদের একসময় নিজেদের কোনো আয় ছিল না। রেশম চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাঁরা পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা রাখছেন। রেশম পোকা চাষে তাঁর পারিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাজল ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের রেশম চাষ উদ্যোগটি গ্রামের নারীদের জন্য খুব সহায়ক হয়েছে। তাঁরা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজেদের ও তাঁদের ছেলেমেয়েদের খরচ বহন করতে পারছেন তাঁরা।