রৌমারীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ৪ দিন ধরে পড়ে আছে ঘাটে

রৌমারী নৌকাঘাটে এভাবে আটকে আছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা ভুক্তভোগীদের। আজ বৃহস্পতিবার তোলা
প্রথম আলো

ট্রাক্টর চলাচল বন্ধের কারণে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির ১২০ মেট্রিক টন চাল চার দিন ধরে রৌমারীর নৌকাঘাটে আটকে রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু বহনকারী ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় পাঁচ শিশু মারা যায়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। গত সপ্তাহে তাঁরা বালু উত্তোলন ও ট্রাক্টর চলাচল বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ কারণে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন সাময়িকভাবে ট্রাক্টরচালকদের লাইসেন্স ছাড়া ট্রাক্টর না চালতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ আদেশ অমান্য করার অপরাধে গত সপ্তাহে ট্রাক্টরের দুই ড্রাইভারকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ দিন সাজা দেন। এ কারণে ট্রাক্টর মালিক-শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে স্থবির হয়ে পড়েছে ট্রাক্টরে মালামাল পরিবহন কার্যক্রম।

বাজারের ভালো চালের দাম ৬০-৭০ টাকা। আমাদের গরিবের মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি, যা আমার কেনার সামর্থ্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১০ টাকা দরের চাল যদি না পাই, তাহলে কী খেয়ে বাঁচি?
সাইফুল ইসলাম, কার্ডধারী হতদরিদ্র

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রৌমারী নৌকাঘাটে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে আটকে আছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১২০ মেট্রিক টন চাল। এ ছাড়া চিলমারী ডিপো থেকে নিয়ে আসা ডিজেলভর্তি শতাধিক ড্রাম ও রৌমারী বাজারের গালামাল দোকানদারেরা নিত্যপণ্য সামগ্রীও নিয়ে যেতে পারছেন না। অন্যদিকে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মাটি, ইট, সিমেন্ট, পাথর ও বালুও আনতে পারছেন না এলাকার মানুষ। এসব ট্রাক্টর চলতে না পারায় দাঁতভাঙ্গা-জামালপুর সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার মহাসড়ক ও ব্রহ্মপুত্র নদের ৩ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও বন্ধ রয়েছে।

কার্ডধারী হতদরিদ্র সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের ভালো চালের দাম ৬০-৭০ টাকা। আমাদের গরিবের মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি, যা আমার কেনার সামর্থ্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১০ টাকা দরের চাল যদি না পাই, তাহলে কী খেয়ে বাঁচি?’

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক (ডিলার) স্বাধীন মিয়া বলেন, ‘আমরা ডিলাররা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েও গুদামে চাল না থাকায় কার্ডধারীদের চাল দিতে পারছি না।’

রৌমারী নৌকাঘাটে এভাবে আটকে আছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল, ডিজেল ও নিত্যপণ্যসামগ্রী। ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ থাকায় মাল খালাস করা যাচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার তোলা
প্রথম আলো

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইশকে আবদুল্লাহ বলেন, উপজেলার বরাদ্দ করা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২২০ মেট্রিক টন চাল কুড়িগ্রাম খাদ্যগুদাম থেকে সড়ক ও নৌপথে আনতে হয়। পরিবহন জটিলতার কারণে রৌমারী নৌকাঘাটে ১২০ মেট্রিক টন চাল আটকে রয়েছে। বাকি চালগুলো কুড়িগ্রাম খাদ্যগুদামেই রয়েছে। ফলে রৌমারী উপজেলার ১৪ হাজার ৫৯৪ জন কার্ডধারীর চাল বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয় ট্রাক্টরমালিক কানু মিয়া বলেন, ‘রৌমারী উপজেলার বেশির ভাগ রাস্তায় ট্রাক্টর ছাড়া চলাচল করা অতি দুষ্কর। কারণ, অন্য যানবাহন এসব রাস্তায় চলে না। ট্রাক্টর বন্ধ করলে কীভাবে মালামাল পরিবহন করা হবে? তা ছাড়া অনেক ট্রাক্টরমালিক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কিস্তিতে ট্রাক্টর কিনেছেন। এখন চালাতে না পারলে কীভাবে লোন পরিশোধ করব? মানবিক কারণে প্রশাসনের কাছে দ্রুত ট্রাক্টর চলাচলের অনুমতির দাবি জানাচ্ছি।’

রৌমারী উপজেলার বেশির ভাগ রাস্তায় ট্রাক্টর ছাড়া চলাচল করা অতি দুষ্কর। কারণ, অন্য যানবাহন এসব রাস্তায় চলে না। ট্রাক্টর বন্ধ করলে কীভাবে মালামাল পরিবহন করা হবে? মানবিক কারণে প্রশাসনের কাছে দ্রুত ট্রাক্টর চলাচলের অনুমতির দাবি জানাচ্ছি।
কানু মিয়া, স্থানীয় ট্রাক্টরমালিক

তবে এলাকাবাসীর আন্দোলনের অন্যতম নেতা গণকমিটি আহ্বায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ‘এগুলো ট্রাক্টর সমিতির অপচেষ্টা। প্রশাসন বিকল্প পরিবহনে ঘাট থেকে মাল আনতে পারে। বহু ব্যবস্থা আছে।’

রৌমারী উপজেলা ট্রাক্টরমালিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করে ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে নদী থেকে উত্তোলন করা বালু পরিবহনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও বুধবার সন্ধ্যায় মালিক-শ্রমিক মিটিংয়ে ড্রাইভারদের লার্নার ও লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মালামাল পরিবহনে যাতে কোনো ভোগান্তি না হয়, সে ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।