র‌্যাগিংয়ের দায়ে তিন শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার, মুচলেকা দেবেন ১০ জন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

র‌্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অপরাধে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের আরও ১০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে রিজেন্ট বোর্ডের ৭৮তম বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

আজীবন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) মো. আল-আমিন, গণিত বিভাগের মো. সোহেল রানা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বারিউল হক। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে র‌্যাগিংয়ের মতো অপরাধে জড়িত থাকবে না মর্মে অভিভাবকের সম্মতিসহ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিতে হবে আরও ১০ শিক্ষার্থীকে। মুচলেকা না দিলে ওই শিক্ষার্থীদেরও এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই ১০ শিক্ষার্থী হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাবুব হাসান, রসায়ন বিভাগের শেখ জুবায়ের, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান রহমান, কেমিকৌশল (সিএইচই) বিভাগের পারভেজ মিয়া ও এস বি সানাউল্লাহ সাকিব, পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) মোহাইমিনুল হক ও খালিদুজ্জামান সৌরভ, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগের রাফিউর রহমান, কেমিকৌশল (সিএইচই) বিভাগের সালমান মোল্ল্যা, পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) সাইমুন নাইস। তাঁরা প্রথম ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটি ‘রুলস অব ডিসিপ্লিন ফর স্টুডেন্টস’ অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

রিজেন্ট বোর্ডে উত্থাপিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩২০ নম্বর কক্ষ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাব্বির আলমকে ডেকে নিয়ে গণিত বিভাগের সোহেল রানা, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বারিউল হক ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের আল-আমিন শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এর ফলে সাব্বির আলম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
ওই কক্ষে উপস্থিত অন্য ১০-১৫ ছাত্র তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন বলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে। সাব্বির আলম জ্ঞান হারানোর পর তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং হাসপাতালে না নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আবদুল মজিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-৩) সৈয়দা নওয়ারা জাহান, সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক সলিমুল্লাহ, সাভারের পরমাণুশক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম আসাদুজ্জামান, যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাওছার উদ্দিন আহম্মদ, ইউজিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিনিয়র কনসালটেন্ট এম এ রশীদ, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাবীব প্রমুখ।