লঞ্চে আটকা ৯ নারী-শিশু ঠাঁই পেলেন সরকারি বাংলোয়

লঞ্চে করে মঙ্গলবার সকালে বরিশাল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন চার নারী। তাঁদের সঙ্গী পাঁচ শিশু। পথে দুপুরে লঞ্চটি এক জায়গায় নোঙর করে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেখান থেকে লঞ্চটি আর ছাড়তে দেয়নি পুলিশ। এতে বিপদে পড়ে যান এই নারী ও শিশুরা। বাধ্য হয়ে উথালপাতাল ঢেউয়ের মধ্যে ওই লঞ্চেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তবে তাঁদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন। মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন তাঁদের সরকারি ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

বৈরী আবহাওয়ায় ঘাটে বেঁধে রাখা ছোট লঞ্চ
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। আর লঞ্চটি নোঙর করা হয়েছিল সেখানকার কালাইয়া লঞ্চঘাটে। আটকে পড়া নারী ও শিশুদের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কলমী, দুলার হাট, ঘোষের হাট ও বাবুর হাট এলাকায়।

লঞ্চে অবস্থান করা এই নয়জন হলেন, নার্গিস বেগম (৫৫), ফাতেমা বেগম (৬০), মারজান (৩৫) ও তাঁর দেড় বছরের শিশু নাজমুন্নাহার, মোছা. জান্নাত (৪০) ও তাঁর পাঁচ বছরের শিশু সামিয়া এবং জান্নাতের স্বজন সাথী (১২), মো. রাকিব (৮) ও মো. জিহাদ (৮)।

ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়। মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর আন্ডার চর এলাকার বাঁধে
ছবি: প্রথম আলো

চর কলমীর বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, তিনি চিকিৎসার জন্য বরিশাল গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সকালে বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা এমভি রিসান-৩ লঞ্চটিতে ওঠেন। লঞ্চটি দুপুর ১২ টার দিকে কালাইয়া লঞ্চঘাটে নোঙর করে। তখন নদী ছিল উত্তাল। এরপর পুলিশ এসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লঞ্চটি আর ছাড়ার অনুমতি দেয়নি। এখানে কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়ি না থাকায় লঞ্চেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর মতো অন্য আটজনেরও একই অবস্থা। কিন্তু রাত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া আরও খারাপ হতে থাকে। তখন তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

স্থানীয় সংবাদকর্মী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি জানতে পেরে লঞ্চ ঘাটে জান এবং বিষয়টি বাউফল প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুজ্জামানকে জানান। পরে কামরুজ্জামান বিষয়টি ইউএনও জাকির হোসেনকে জানালে রাত ১০ টার দিকে পুলিশ আসে। এরপর পুলিশের মাধ্যমে ওই নারী ও শিশুদের উপজেলা সদরের থানার সামনে সরকারি ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

অধিকাংশ আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশের ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস

মারজান বেগম বলেন,‘আমাগো আশ্রয়ে দেয়ার লাইগা ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ। এই উপকারের কথা কোনো দিন ভুলতে পারব না।’

ইউএনও জাকির হোসেন বলেন,‘কতটা অসহায় হলে মানুষ লঞ্চে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাও আবার দুর্যোগের মধ্যে শিশু সন্তানসহ। কোনো পুরুষ সদস্য তাঁদের সঙ্গে নাই। বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর ওই অসহায় ব্যক্তিদের উদ্ধার করে রাতের খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এটা আমার দায়িত্ব। তবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করেছেন সাংবাদিকেরা।’