লাভের বদলে শুধুই ক্ষতি

সুবিধা দেওয়ার কথা বলে কৃষকদের হাইব্রিড বোরো চাষে উদ্বুদ্ধ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অনেক কৃষক সুবিধা পাননি, বাজারে এই ধানের দামও কম।

সমলয়ে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে জয়পুরহাট সদরের হিচমি-কোমরগ্রামে। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় চলতি রবি মৌসুমে জমিতে ব্লক প্রদর্শনীর মাধ্যমে হাইব্রিড (এসএল-৮ এইচ) বোরো ধান চাষের উদ্যোগ নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। নাম দেওয়া হয় সমলয় চাষাবাদ প্রকল্প। এর আওতায় জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত সব খরচ বহন করবে অধিদপ্তর। এমন সুবিধাভোগী ৬৭ জনের মধ্যে অন্তত ১২ জন কৃষক অভিযোগ তুলেছেন যে তাঁরা বেশির ভাগ সুবিধা পাননি।

কৃষকেরা বলছেন, অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী হাইব্রিড বোরো ধান চাষ করতে গিয়ে তাঁদের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। বাজারে দামও কম পাচ্ছেন। এর চেয়ে জিরাশাইল ও কাটারিভোগ জাতের ধান চাষ করেই তাঁরা বেশি লাভ করতেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি মৌসুমে জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমি-কোমরগ্রামের ফসলি মাঠের ৫০ একর জমিতে এই প্রকল্প হাতে নেয়। ৬৭ জন কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী। কৃষি মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পে ১৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে বীজের জন্য ৯০ হাজার ও সারের জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ২ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

প্রকল্প অনুযায়ী সুবিধাভোগী কৃষকেরা বিনা মূল্যে বীজ, সার, সেচ, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে চারা রোপণ ও কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান মাড়াই করবেন। কৃষকেরা বলছেন, তাঁরা শুধু বীজ আর সার পেয়েছেন। সেচ, পরিচর্যা ও মাড়াই করতে হয়েছে নিজেদের টাকায়। কৃষি বিভাগের লোকজন ঠিকমতো খোঁজও নেননি।

প্রকল্প এলাকা কোমরগ্রাম ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে কৃষকদের করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে জয়পুরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কায়ছার ইকবালও কথা বলতে রাজি হননি।

কোমরগ্রামের কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, তাঁর চার বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান রোপণ করেছিলেন। এ জন্য ১৩০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭৫ কেজি পটাশ, ৭৫ কেজি ফসফেট, ৪০ কেজি জিপসাম, ৪ কেজি জিংক, ১০ কেজি বীজ ও কীটনাশক পেয়েছেন। সব মিলিয়ে চার বিঘা জমিতে এখন পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৩৩৫ টাকার সহায়তা পেয়েছেন। সেচকাজ ও পরিচর্যা নিজের টাকায় করেছেন।

কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রকল্পে ৫০ একরে (দেড় শ বিঘা জমি) চাষের কথা বলা হলেও বাস্তবে ১৪০ থেকে ১৪২ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের লোকজন তাঁদের হাইব্রিড জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে নিজেদেরই শ্রমিক নিয়োগ করে ধান কাটা ও মাড়াই করতে হয়েছে। প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫ মণ করে ফলন পাওয়া গেছে। বাজারে এই ধানের দাম কম।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স ম মেফতাহুল বারি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কৃষক নিজ ইচ্ছায় ধান মাড়াই করলে তা ওই কৃষকের ব্যাপার। প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কি না, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।