মৌসুমি ফল
লাল লিচুতে রঙিন ঈশ্বরদী
বড় কোনো বিপর্যয় না হলে লিচুর রাজধানী ঈশ্বরদীতে এবার ৫০০ কোটি টাকার লিচু-বাণিজ্য হবে।
গাছে গাছে ঝুলছে টুকটুকে লাল লিচু। কেউ গাছে উঠে লিচু ভাঙছেন, কেউবা নিচে বসে বাছাই করছেন। মান অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে ঝুড়ি। এরপর সেগুলো চলে যাচ্ছে স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবের আমেজ।
জ্যৈষ্ঠ মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লিচুবাগানগুলোতে দেখা গেছে এমন কর্মচাঞ্চল্য। বর্তমানে মোজাফ্ফর বা দেশি লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকে সুস্বাদু বোম্বাই জাতের লিচু পাওয়া যাবে।
লিচুচাষি ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ার জন্য লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বর্তমানে লিচুতে লাল রং আসতে শুরু করেছে। বড় কোনো বিপর্যয় না হলে শুধু ঈশ্বরদী উপজেলায় এবার ৫০০ কোটি টাকার লিচু–বাণিজ্য হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, পাবনায় এবার মোট ৪ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঈশ্বরদীতেই রয়েছে ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর। বাকি আবাদ রয়েছে সদর, আটঘরিয়া ও চাটমোহরে। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের কারণে ৪২ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টন লিচু পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। গত মৌসুমের হিসাবে যার বাজার দর প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঝড়–বৃষ্টিতে কিছু লিচু নষ্ট হয়। এ ছাড়া উৎপাদন বেশি থাকায় দাম কিছুটা কম রয়েছে। ফলে বর্তমান দাম হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হতে পারে।
গত সোমবার সরেজমিনে ঈশ্বরদীর লিচুবাগানগুলো ঘুরে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি বাগান চোখে পড়েছে উপজেলার সাহাপুর, সিলিমপুর, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, জয়নগর, মানিকনগর, আওতাপাড়া ও বাঁশেবাদা এলাকায়। টুকটুকে লাল লিচুতে রঙিন হয়ে আছে চারপাশ।
এদিকে লিচু বেচাকেনার জন্য অস্থায়ী হাট বসেছে উপজেলার জয়নগর, শিমুলতলা, আওতাপাড়া ও সিলিমপুর এলাকায়। মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলছে কেনাবেচা। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে লিচু কিনছেন। ট্রাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। বর্তমান পাইকারি বাজারে প্রতি হাজার দেশি লিচু মানভেদে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অল্পস্বল্প বোম্বাই লিচু মিললেও তা বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে।
আওতাপাড়া গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী লিটন হোসেন বলেন, ঈশ্বরদীর লিচু বেশ সুস্বাদু। ফলে দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার মোকামে লিচু পাঠানো শুরু হয়েছে।
ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয় আশির দশকে। ওই সময়ে শৌখিন কিছু মানুষ বাড়ির আঙিনায় লিচুর চাষ শুরু করেন। অন্য ফল-ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় লিচু চাষে ঝুঁকতে থাকেন চাষিরা। বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার ধার থেকে লিচু চাষ ছড়িয়ে পড়ে মাঠে-ময়দানে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর লিচুর ফলন উপযোগী আবহাওয়া রয়েছে। গ্রীষ্মের শুরুতে বড় আকারের ঝড়–বৃষ্টি না হওয়ায় বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, উপজেলাটিতে যে পরিমাণ লিচু উৎপাদন হয়, সে বিবেচনায় এখানে লিচু সংরক্ষণাগার (হিমাগার) প্রয়োজন।