লালনের তিরোধান দিবসে বন্ধ আখড়াবাড়িতে ভিড় অনেকের

ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস আজ শনিবার। এ উপলক্ষে বন্ধ থাকার পরও অনেক ভক্ত ভিড় জমান কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়াবাড়ির ফটকের সামনে
প্রথম আলো

আজ শনিবার, ১ কার্তিক। ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস। প্রতিবছর এই দিনে তাঁর লাখো ভক্ত–অনুসারী জড়ো হন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে। স্মরণ করেন তাঁদের সাঁইজিকে। কিন্তু এবার করোনাকালে আগে থেকেই আয়োজন স্থগিত করে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তবুও কিছু সাধু-ভক্ত এসেছেন প্রিয় সাঁইজিকে ভক্তি-শ্রদ্ধা জানাতে।

সকাল ১০টার দিকে আখড়াবাড়ির প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায় তালা লাগানো। ওপরে ব্যানার টাঙানো। তাতে লেখা, ‘মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবস উদ্‌যাপন স্থগিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।—অনুরোধক্রমে কর্তৃপক্ষ।’

দেখা গেল, সাদা গেরুয়া পরা ৫০ জন সাধু-ভক্ত ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ ভেতরে যাওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। ফটকের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। কথা হলো কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে আসা আবদুল হামিদ ফকিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৩০ থেকে ৩৫ বছর ধইরি আসি। সবই শুনছি, কিন্তু থাইকতে পারিনি। মনটা বাইনদি রাখতে পারিনি, চলি আইছি। আমার ২৪ ঘণ্টা ডিউটি (অষ্টপ্রহার)। সিডা হইলিই চইলি যাব। জীবনে এমন দেখিনি। আফসোস একটাই, যদি সাঁইজির চরণধূলি নিতি পারতাম। তাইলি চলি যাতাম।’

মুন্সিগঞ্জ থেকে পাঁচজনের একটি দল এসেছে আখড়াবাড়িতে। ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে দলের সদস্যরা জানালেন, এবার আয়োজন হবে না,Ñসেটা তাঁরা জানতেন না। সাঁইজির চরণে গিয়ে সরাসরি শ্রদ্ধা জানাবেন, সেটাও দিতে পারছেন না। করোনা যে কী করে দিল!

কুষ্টিয়ায় লালন শাহের আখড়াবাড়ির বন্ধ ফটকের সামনে ভক্তদের ভিড়
প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ থেকে আসা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে এই আখড়াবাড়িতে আসেন। তিনি জানতেন না সরকার এতটা কড়াকড়ি করেছে। তবু যখন এসে পেড়েছেন, সীমিত আকারে গুরুকর্ম করে চলে যাবেন।

তাঁদের মতো অনেক ভক্ত-অনুসারী ধীরে ধীরে ফটকের সামনে জড়ো হচ্ছেন। সেখানেই ভক্তি-শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। ভক্ত–সাধু–অনুসারীদের আকুতি, যদি অল্প কিছুক্ষণের জন্য ফটকের তালা খুলে দিয়ে সাঁইজির চরণে শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো, তাঁদের মনটা শান্তি পেত।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে এক গাড়ি পুলিশ আসে। এরপর সেখানে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুৎফুন নাহার ও কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান আসেন। তবে তাঁরা গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেননি। জানা গেল, আখড়াবাড়ির ফটক খোলা হবে না।

৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি বড় ধরনের গণজমায়েত করা হয়, তাহলে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। তাই সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুষ্টিয়ায় সব ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ আছে। তিনি ১ কার্তিক আখড়বাড়িতে লালন ভক্ত-অনুসারীদের না আসার অনুরোধও জানিয়েছিলেন।