লালপুরে পুলিশের আম-মুড়ি উৎসব

নাটোরের লালপুর থানা চত্বরে পুলিশ ও জনতার সম্মিলনে আম-মুড়ি উৎসব। বৃহস্পতিবার বিকেলে
প্রথম আলো

উন্মুক্ত মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চেয়ার নিয়ে বসে পড়েছেন পুলিশ-জনতা। সবার হাতে প্লেটভর্তি ক্ষীরশাপাতি আম ও মুড়ি। আম চিপে মুড়ি ভিজিয়ে হাপুসহুপুস করে খাওয়া শুরু করলেন একসঙ্গে। যাঁর যতটুকু দরকার, তিনি ততটুকু করে চেটেপুটে খেলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এই দৃশ্য চোখে পড়ে নাটোরের লালপুর থানা চত্বরে।

সবারই যখন নিজ নিজ বাসায় বসে বিকেলের নাশতা করার কথা, লালপুর থানা চত্বরে অনুষ্ঠিত হলো ‘গণনাশতা’। যদিও থানা কর্তৃপক্ষের দাবি, এটা আসলে গতানুগতিক নাশতা নয়, এটা একটা উৎসব। স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে খোলা জায়গায় এই আয়োজন। উৎসবে অংশগ্রহণ ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থেকে শুরু করে কনস্টেবল ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন। এমনকি থানাহাজতে থাকা আসামি ও দর্শনার্থীরাও আম-মুড়িতে অংশ নেন।

সুমিষ্ট ক্ষীরশাপাতি আম ও মুড়ি রাখা ছিল এক জায়গায়। যাঁর যতটুকু ইচ্ছা, তিনি ততটুকু নিয়ে খেয়েছেন। খেতে খেতে অনেকে গল্পে মেতে উঠেছেন। মা-দাদির হাতে আম-মুড়ি খাওয়ার গল্প মনে করে অনেকে প্রিয়জনদের কথা স্মরণ করেছেন।

লালপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফজলুর রহমান বলেন, পুলিশকে সারাক্ষণ কোনো না কোনো কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যেমন আনন্দ উৎসবে মিলিত হয়ে ওঠা হয় না, তেমনি সহকর্মীদের সঙ্গেও মজা করার সময় পাওয়া যায় না। বিশেষ করে করোনাকালে তাঁরা যেন ‘রোবট’ হয়ে গেছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য তাঁরা আম-মুড়ি উৎসবের আয়োজন করেছেন।

নাটোরের লালপুর থানা চত্বরে পুলিশ ও জনতার সম্মিলনে আম-মুড়ি উৎসব। বৃহস্পতিবার বিকেলে
প্রথম আলো

লালপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, করোনা এসে তাঁদের কাজ যেন বেড়ে গেছে। নিয়মিত কাজের বাইরে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ প্রতিপালনেও তাঁদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে সবার মধ্যে একঘেয়েমি কাজ করছিল। একঘেয়েমি থেকে বের হয়ে আসার জন্যই আম-মুড়ির আয়োজন। এই আয়োজন সফল হয়েছে। এখন তাঁরা আবার কাজে মনোযোগ দেবেন।

লালপুর থানার ওসি ফজলুর রহমান বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে আমরা মা-বাবার কাছে বসে আম-মুড়ি খেতে পারি না। অথচ আমের এখন ভরা মৌসুম। তাই সবাই মিলে আম-মুড়ি খাওয়ার মধ্য দিয়ে পারিবারিক আনন্দ উপভোগ করেছি। এতে সবার মাঝে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। আর এটাকে উৎসবের রং দিতে গিয়ে আমরা থানার হাজতিসহ উপস্থিত সবাইকে যুক্ত করেছি। তাতে আনন্দটা সবার মাঝে ভাগাভাগি হয়েছে।’ এখন থেকে প্রতিবছর লালপুর থানায় আম-মুড়ি উৎসব হবে বলে তিনি জানান।