লালপুরে ১৪৪ ধারা জারি করা মাঠে গিয়ে কমিটি ঘোষণা করলেন সাংসদ

শেখচিলান প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করছেন সাংসদ শহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের দুপক্ষ একই সময়ে সভা আহ্বান করায় নাটোরের লালপুর উপজেলার শেখচিলান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। এর মধ্যেই সেখানে দলবল নিয়ে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেছেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ শহিদুল ইসলাম। অবস্থানকালে তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিও ঘোষণা করেন।

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সেখানে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয় মাঠের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন। সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিষয়টি আগে জানতেন না। মাঠে ঢুকে কমিটি ঘোষণার সময় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানতে পারেন। তখন তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় শেখচিলান প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ১-৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আহ্বান করেন। একই মাঠে একই সময় বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা দলের বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করেন। সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়। সম্মেলনে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলামকে প্রধান অতিথি করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

একজন আইনপ্রণেতা হয়ে সাংসদ শহিদুল ইসলাম দেশের আইন ভঙ্গ করতে পারেন না। তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।
আফতাব হোসেন, সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ, লালপুর

এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বিদ্যালয় মাঠে ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মুল বানীন দ্যূতি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ, সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাঠের ২০০ গজের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়। এরপর সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ আয়োজকদের মাঠের প্যান্ডেল ও মাইক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। দুপুর ১২টার পর থেকে স্থানীয় লোকজনকে ওই মাঠে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু বেলা আড়াইটার দিকে সাংসদ শহিদুল ইসলাম শতাধিক নেতা-কর্মীকে নিয়ে পুলিশের সামনেই ওই মাঠে ঢুকে পড়েন। তিনি সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান করে ফিরে যান। অবস্থান করাকালে তিনি মাইকে বক্তব্য দেন এবং কদিমচিলান ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।

১৪৪ ধারা জারি করায় শেখচিলান প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার দায়িত্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের। অথচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের না জানিয়ে সাংসদ শহিদুল ইসলামের কিছু সমর্থক বেআইনিভাবে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। বর্তমান কমিটির নেতারাও সেখানে বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন। সংগত কারণে প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। অথচ সাংসদ শহিদুল ইসলাম তা ভঙ্গ করে সেখানে দলবল নিয়ে সম্মেলন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশের প্রচলিত আইন ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাঁর বিচার হওয়া উচিত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, একজন আইনপ্রণেতা হয়ে সাংসদ শহিদুল ইসলাম দেশের আইন ভঙ্গ করতে পারেন না। তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।

ইউএনও উম্মুল বানীন দ্যূতি বিদ্যালয় মাঠে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর। সেখানে সাংসদ গিয়েছিলেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জানার জন্য লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজাকে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।