লালমনিরহাটে আ.লীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, উত্তেজনা
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের বোন ফাতেমা বেগমের বাড়িতে হামলার ঘটনা নিয়ে শহরে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় থানা রোড, গোশালা বাজার ও রেল বাজার এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের বিক্ষোভ মিছিল মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ানোর চেষ্টা করলেও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফাতেমা বেগমের শহরের সাহেব পাড়ার বাসায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হামলা ও ভাঙচুর হয়। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন ওরফে বক্করসহ ২০ জনের নাম–পরিচয় উল্লেখ করে গতকাল শুক্রবার সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ফরিদ হাসান ওরফে সবুজের মা।
এই মামলাকে কেন্দ্র করে শহরের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লে চরম অসন্তোষ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আজ শনিবার সকালে শহরের থানা রোডে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে একটি মিছিল বের হয়। অপর দিকে লালমনিরহাট শহরের রেলওয়ে স্টেশন রোডের জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে আরেকটি মিছিল বের হয়। এই মিছিল থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাবেদ হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতিসহ মামলাটি বাতিলের দাবি জানানো হয়।
মিছিল দুটি শহরের থানা রোড এলাকায় মুখোমুখি অবস্থায় গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় থানা রোড, গোশালা বাজার ও রেল বাজার এলাকার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত উভয় পক্ষের বিক্ষোভ মিছিল মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ানোর চেষ্টা পুলিশের হস্তক্ষেপে নিবৃত হয়। উভয় পক্ষের মিছিলের লোকজনের হাতে বাঁশ ও কাঠের বড় বড় লাঠিসহ ধারালো ছোরা ও চাকু, লোহার রড দেখা গেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, তাঁর বোনের বাসায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এটা সবার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির কর্মকাণ্ডের বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অবহিত করেছি। আশা করছি তারাও সব কিছু খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাবেদ হোসেন বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফরিদ হাসান সবুজের বাসায় হামলার ঘটনায় জড়িত নই, আমি ঘটনার দিন ওই বাসায় যাইনি, অথচ আমার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধ্বংসের জন্য আমাকে হয়রানিমূলক মামলায় ১ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমি অবিলম্বে এ মামলার প্রত্যাহার দাবি জানাচ্ছি।’
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, শহরের সাহেব পাড়ায় ফাতেমা বেগমের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, শনিবার সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত শহরের থানা রোড, গোশালা বাজার রোড ও রেল বাজার রোডে উভয় পক্ষের মিছিল মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে লালমনিরহাট পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম গত শুক্রবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আগামী রোববারের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আগামী সোমবার লালমনিরহাটে সকাল–সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন।