লিচুগাছে ‘ধরা’ আমটি কৃত্রিমভাবে লাগানো, ধারণা কৃষি বিভাগের

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের লিচু গাছে ‘ধরা’ আম
ফাইল ছবি

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া কলোনিপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের লিচুগাছে ‘ধরা’ আমটি কৃত্রিমভাবে লাগানো হয়েছিল বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। গত বৃহস্পতিবার আবদুর রহমানের লিচুগাছটি উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আজ রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন।

১৭ এপ্রিল বাড়ির পাশে লাগানো একটি গাছে লিচুর থোকার সঙ্গে একটি আম দেখতে পায় আবদুর রহমানের নাতি হৃদয় ইসলাম। পরে ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে যায়। বহু মানুষ এটি দেখতে ভিড় করেন।

লিচুগাছে ধরা আমটির ছবি দেখে সেদিন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদার বলেছিলেন, লিচু ও আমের পুষ্পমঞ্জরি যেখানে হয়, সেটা লম্বা। লিচুরটা লম্বা হলেও আমের বোঁটাটি স্বাভাবিকের তুলনায় খুব খাটো। এই বিষয়ে খটকা লাগছে। লিচু ও আম এক পরিবারের উদ্ভিদ নয়। ক্রোমোসোমের সংখ্যা যদি একই রকম হয়, তবে অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে লিচু ও আমের ক্রোমোসোমের সংখ্যা এক না হওয়ায়, এটা অবিশ্বাস্য। লিচু ও আমের টিস্যু সিস্টেম এক না হওয়ায় আম ও লিচুর গ্রাফটিংও সম্ভব নয়। লিচুর সঙ্গে আমগাছের ডাল জোড়া লেগেছে, এমন উদাহরণ নেই। উদ্ভিদতত্ত্বে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। তিনি সন্দেহ করেছিলেন, কেউ আঠা দিয়ে লিচুগাছের ডালে আমটি লাগিয়েও দিতে পারেন।

এদিকে গাছ দেখা নিয়ে ঝামেলা ও বিতণ্ডার জেরে গত মঙ্গলবার আমটি ছিঁড়ে পালিয়ে যায় একদল তরুণ।

লিচুগাছে আম ধরার রহস্য উদ্‌ঘাটনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন কৃষি কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার আবদুর রহমানের বাড়িতে যান। কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় আগামী মৌসুমের জন্য লিচুগাছটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কৃষি কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমটি ছিঁড়ে ফেলার পর বোঁটা দেখে সন্দেহ লাগছে। বোঁটাটি এক দিনের মধ্যেই শুকিয়ে গেছে। আর লিচুগাছের পাশে একটি গাছে একই জাতের আম পাওয়া গেছে। সেই গাছের একটি আমও নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব মিলিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে আমরা এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না।’

ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমটি প্রাকৃতিকভাবে ধরেছিল কি না, কৃষি বিভাগের একটি দল বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে। আমটি কে ছিঁড়েছে, আমরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা পারিনি। আর ছিঁড়ে ফেলা আমটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘প্রতিনিধি দল ফিরে এসে পর্যবেক্ষণের তথ্য আমাকে জানিয়েছেন। তাঁদের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ছিঁড়ে ফেলার পর আমের বোঁটাটি দ্রুত শুকিয়ে গেছে, যা প্রাকৃতিকভাবে ধরা আমের ক্ষেত্রে হয় না। এসব দেখে মনে হচ্ছে ঘটনাটি সাজানো। আমটি কোনোভাবে লিচুগাছে আটকে দেওয়া হয়েছিল। সংগ্রহ করা আমটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে পাঠানোর কিছু নেই।’