লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে নরসিংদীর এক যুবকের মৃত্যু, নিখোঁজ ২

লিবিয়া থেকে কাঠের নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ঠান্ডায় মারা যাওয়া রাশেদুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়া থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে  ইতালি যাওয়ার পথে ঠান্ডায় নরসিংদীর এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দূতাবাসের মাধ্যমে পাসপোর্ট ও লাশের ছবি দেখে ওই যুবকের পরিবারের সদস্যরা প্রথম আলোর কাছে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ আছেন একই এলাকার আরও দুই যুবক।

নিহত যুবকের নাম মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মো. আবদুর রউফ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় নিখোঁজ দুজন হলেন একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে শরীফুল ইসলাম ও ইউনুস মিয়ার ছেলে সালাহ উদ্দিন।

নিহত যুবকের নাম মো. রাশেদুল ইসলাম (২০)। তিনি বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মো. আবদুর রউফ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় নিখোঁজ দুজন হলেন একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে শরীফুল ইসলাম (২২) ও ইউনুস মিয়ার ছেলে সালাহ উদ্দিন (৩৫)। তাঁরা পরস্পরের দূরসম্পর্কের আত্মীয়। সালাহ উদ্দিনের মাধ্যমেই রাশেদুল ও শরীফুল সাড়ে আট লাখ টাকা করে দিয়ে অবৈধভাবে ইতালির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত তিনটার দিকে লিবিয়ার একটি সৈকত থেকে নৌকায় ইতালির উদ্দেশে অবৈধভাবে রওনা হয় একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। এর দুই দিন পর রোববার দুপুরে লিবিয়ার বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে লাশের সঙ্গে পাওয়া একটি পাসপোর্টের বরাত দিয়ে রাশেদুলের মৃত্যুর খবর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়। ওই সময় লাশের ছবি দেখতে চাইলে আরও দুদিন পর অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতে তাঁদের লাশের ছবি দেখানো হয়। এরপরই রাশেদুলের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয় তাঁর পরিবার।

নিহত রাশেদুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাশেদুল দ্বিতীয়। বাবা কৃষিকাজ করেন। রাশেদুল স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করার পর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন পাশের ভৈরবের হাজী আসমত আলী কলেজে। কিছুদিন কলেজে যাওয়া-আসার পরই পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন তিনি। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় কৃষক বাবাকে ইতালি যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করান তিনি। আত্মীয়দের কাছ থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা ঋণ করে তাঁর হাতে দেন বাবা। পরে সালাহ উদ্দিনের মাধ্যমে রায়পুরার আদিয়াবাদ এলাকার মনির নামের এক দালালের হাতে তুলে দেন ওই টাকা।

রাশিদুলের পরিবার আরও জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হন তাঁরা তিনজন। প্রথমে পাড়ি জমান লিবিয়ায়। সেখানে দেড় মাস থাকার পর দালালের লোকজন ইতালি নেওয়ার জন্য জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁদের নিয়ে যায় লিবিয়ার ত্রিপোলি শহরে। সেখানে ১৫ দিন অবস্থানের পর গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে সাগরপথে নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন। পরে গত রোববার দুপুরে লিবিয়া দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা আমাদের ফোন করে জানান, অবৈধভাবে নৌকায় করে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় মারা যান রাশেদুল। ওই নৌকায় রাশেদুলের সঙ্গে ছিলেন শরীফুল ইসলাম ও সালাহ উদ্দিন। ঘটনার পর থেকে তাঁরা দুজন নিখোঁজ।

নিহত রাশেদুলের বড় ভাই মো. আশিক মিয়া জানান, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে ইতালির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে রাশেদুলের সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তখন দোয়া চেয়ে বলেছিল, কিছুক্ষণ পরেই রওনা হব, একটু পরই মোবাইল বন্ধ করে দেব। সবাই আমার জন্য দোয়া করো। এর তিন দিন পর রাশেদুলের পাসপোর্টের সূত্র ধরে দূতাবাস থেকে ফোন করে তাঁর মৃত্যু খবর জানায় আমাদের। আমরা ভেবেছিলাম, পাসপোর্টটি তাঁর কাছে না থেকে অন্য কারও কাছেও তো থাকতে পারে। তাই লাশের ছবি দেখতে চেয়েছিলাম আমরা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আমাদের লাশের ছবি দেখানো হলে আমরা তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঁর লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’

নিখোঁজ সালাহ উদ্দিনের বড় ভাই কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, ‘অসমর্থিত একটি সূত্রে জানতে পেরেছি, সালাহউদ্দিন ও শরীফুলসহ আরও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে আমরা তা নিশ্চিত হতে চাই। সালাহ উদ্দিন এলাকায় ওষুধের ব্যবসা করত। এসএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করেনি সে। তার স্ত্রী ও দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।’

অন্যদিকে নিখোঁজ শরীফুল ইসলামের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন,‘মূলত সালাহ উদ্দিনের প্ররোচনায় আমার ছেলে শরীফুল ইতালি যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। সে ২০২০ সালে ভৈরবের হাজী আসমত আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শরীফুল তৃতীয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে দোয়া চেয়েছিল সে। আমি আমার ছেলের খোঁজ চাই।’

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহীন বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তাঁর লাশ দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে আমার কাছ থেকে নেওয়া একটি প্রত্যয়নপত্র তাদের দরকার হবে। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি।’