লোকসানের কালে দেশে আখের নতুন জাত

প্রতি একরে এই জাতের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উৎপাদন ১২১ দশমিক ৫২ মেট্রিক টন। সর্বোচ্চ চিনি ধারণক্ষমতা ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ।

আখ খেত।
ফাইল ছবি

দেশের চাষিরা এখন উচ্চফলনশীল আখের যে জাতগুলোর চাষ করেন, তার চেয়ে ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি উৎপাদনক্ষমতার জাত উদ্ভাবনের দাবি করেছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই)। এরই মধ্যে রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর, গাজীপুর ও পাবনার ঈশ্বরদীতে আখের এই জাতের পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। এই জাতের নাম দেওয়া হয়েছে বিএসআরআই আখ-৪৮।

দেশে এমন সময় উচ্চফলনশীল আখের জাত উদ্ভাবন হলো যখন চিনিকল বন্ধ হওয়ায় আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। সরকারি ১৫টির মধ্যে ছয়টি চিনিকলই বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। আর জাতটির পরীক্ষামূলক চাষ হয়েছে এমন এলাকাগুলোর মধ্যে থাকা পাবনার চিনিকলটিও বন্ধ।

তবে আখচাষিদের ফেডারেশনের নেতারা বলেছেন, উচ্চফলনশীল জাত পাওয়া গেলে চাষিরা হয়তো আবারও আগ্রহ ফিরে পাবেন। উচ্চফলনশীল জাত পাওয়া গেলে লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন চাষিরা। সে ক্ষেত্রে আখ বিক্রি করতে হবে গুড় তৈরির কারখানায়।

নতুন জাতটি সম্পর্কে বিএসআরআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি একর জমিতে এই জাতের আখ চাষ করে ৯৩ দশমিক ৫০ থেকে ১২১ দশমিক ৫২ মেট্রিক টন পর্যন্ত উৎপাদন পাওয়া যেতে পারে। এর চিনি ধারণক্ষমতা ১২ দশমিক শূন্য ৬ থেকে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। গুড় আহরণের হার ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। জাতটি মোটা ও রোগপ্রতিরোধী। এই জাতে লাল পচা রোগ হয় না।

এর আগে দেশে উচ্চফলনশীল আখগুলোর মধ্যে চেকজাত-৩৯ অন্যতম ছিল। বিএসআরআই আখ-৪৮ চেকজাতের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি উৎপাদন দেবে। চেকজাত-৩৯–এর তুলনায় নতুন জাতে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ চিনি এবং শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি গুড় আহরণ করা যাবে।

দেশে বিএসআরআইয়ের একমাত্র কার্যালয় পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত। এর মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, সম্প্রতি ন্যাশনাল সিড বোর্ড এক সভায় নতুন জাতের এই আখের অনুমোদন দিয়েছে। ২০০৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের দুটি উচ্চফলনশীল জাতের আখ নিয়ে কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে দুই দেশের দুটি জাত ক্রস করে ক্লোন নির্বাচন শেষে নতুন জাতটির উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মাঠপর্যায়ে চাষের মাধ্যমে নতুন জাতের সফলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নতুন জাতটি সম্পর্কে বিএসআরআই দাবি করছে, এই আখের পাতায় ধার কম। ফলে শ্রমিকেরা অনায়াসে জমিতে কাজ করতে পারবেন। অগ্রবর্তী ফলন পরীক্ষা, আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষাসহ বেশ কিছু গবেষণায় জাতটিকে নতুন জাত হিসেবে অবমুক্তের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) সমজিৎ কুমার পাল জানান, বর্তমানে আখটির লিডার বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাধারণত বিএডিসির মাধ্যমে নতুন জাতের বীজ কৃষকের হাতে পৌঁছায়। আখের ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না। বিভিন্ন সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন এ আখের বীজ তৈরি করবে। আগামী এক বছরের মধ্যেই কৃষকের হাতে এই বীজ ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়া যাবে। এই জাতের আখ চাষ করে কৃষক লাভবান হবেন।

তবে লাভ পেতে হলে চিনির পাশাপাশি বেশি করে গুড় উৎপাদনে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, চিনিকল বন্ধসহ বিভিন্ন কারণে ক্রমাগত লোকসানের পরেও দেশে আখ চাষের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিছু জমি আছে যেগুলো আখ চাষের জন্যই উপযোগী। অন্যদিকে আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এর ক্ষতি কম হয়।

নতুন জাতটি সম্পর্কে শাহজাহান আলী বলেন, উৎপাদনক্ষমতা বেশি থাকার পাশাপাশি রোগবালাই ও পাতার ধার কম থাকার কথা বলা হচ্ছে। তিনটি দিকই কৃষকের জন্য অনুকূল। চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলার আগেই দ্রুত কৃষক পর্যায়ে নতুন জাতের বীজ সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। উৎপাদন সত্যিই বেশি হলে চাষিরা হয়তো আবারও আগ্রহ ফিরে পাবেন।