লোহাগাড়ায় ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ, চালক আহত

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার লোহাগাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে ওই গাড়ির চালক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ইউনিয়নের নজুমুন্নিছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। একই ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন।

মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উপজেলার লোহাগাড়া ছাড়াও আমিরাবাদ ও আধুনগর ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় আমিরাবাদ কয়েকটি কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।

বেলা দেড়টার দিকে লোহাগাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নজুমুন্নিছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নীলুফা ইয়াছমিন চৌধুরীর নির্দেশে আটক করে তাঁর গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে আটক আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবকে ছিনিয়ে নেন। ককটেল বিস্ফোরণে গাড়ির পাশে দাঁড়ানো চালক মো. শাহেদ (৩০) আহত হন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাবলু শংকর নাথ প্রথম আলোকে বলেন, এক প্রার্থীর লোকজন কয়েকটি বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার কেড়ে নেন। এ সময় কেন্দ্রের বাইরে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর বেলা দুইটার দিকে সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নীলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক স্থানীয় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। কিন্তু ওই আটক ব্যক্তির সহযোগীরা তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ সময় একটি ককটেলের আঘাতে গাড়ির চালক আহত হন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর লোকজন বিভিন্ন কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। ব্যালট পেপার নিয়ে নিজেরা সিল মেরেছেন। একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যাওয়ার সময় আমার গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে।
শাহাব উদ্দীন চৌধুরী, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, লোহাগাড়া ইউনিয়ন পরিষদ

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, লোহাগাড়া ইউপির রশিদেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে নারী ও পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি। কেন্দ্রের ভেতরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্টরা সাধারণ ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। এই কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাব উদ্দীন চৌধুরীর (আনারস) এজেন্ট জমির আহমদের অভিযোগ, নৌকা প্রতীকের লোকজন সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে নিজেরাই সিল মেরেছেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লোহাগাড়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নুরুচ্ছফার উপস্থিতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাব উদ্দীন চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হামলাকারীদের লাঠির আঘাতে আবদুর রাজ্জাক (৪০) ও নাজিম উদ্দিন (৩৫) নামের দুই ব্যক্তি আহত হন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাব উদ্দীন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাঁর লোকজন বিভিন্ন কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন। ব্যালট পেপার নিয়ে নিজেরা সিল মেরেছেন। একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যাওয়ার সময় আমার গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে।’

আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুফিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম ইউনুচ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক (টেবিল ফ্যান) ও দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বেলা সাড়ে তিনটার পর ওই কেন্দ্রে কিছুক্ষণ ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইয়াকুব প্রথম আলেকে বলেন, কয়েক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় কিছু সময়ের জন্য ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়।

আধুনগর ইউনিয়নের রশিদারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বেলা আড়াইটার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল কবিরের কর্মী-সমর্থকেরা ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিজিবির সদস্যরা দ্রুত কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকের হোসাইন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।’