শখের এক জোড়া লাভবার্ড থেকে ৩ হাজার পাখি

২০১৬ সালে শখ করে এক জোড়া পাখি পালতে শুরু করেন এই দম্পতি। সেই এক জোড়া থেকে এখন ৩ হাজার পাখি আছে তাঁদের খামারে।

জামালপুরে এক দম্পতির খামারে নানা প্রজাতির পাখি।ছবি: প্রথম আলো

বেকারত্বের জীবন নিয়ে সালমা সুলতানা ও লোমান রেজা দম্পতির মধ্যে হতাশা বেড়েই চলছিল। দিনবদলের আশায় একসময় ধারদেনা করে ইরাকে পাড়ি জমান লোমান। সেটা ২০১২ সালের কথা। কিন্তু সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। চার বছর পর ফিরে আসেন দেশে। তখন শখ করে এক জোড়া পাখি পালতে শুরু করেন এই দম্পতি। সেই এক জোড়া পাখি থেকে এখন ৪০ প্রজাতির প্রায় ৩ হাজার পাখি আছে তাঁদের খামারে। খরচ বাদে মাস শেষে আয় প্রায় লাখ টাকা।

জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের সুলতান নগর গ্রামের বাসিন্দা সালমা ও লোমান। লোমান ২০১১ সালে ডিগ্রি পাস করলেও কোথাও চাকরি বা কিছুই করে উঠতে পারছিলেন না। অথচ এই দম্পতি এখন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে আদর্শ।

ঐতিহ্যবাহী বামুনজী বিলের পাশের সড়ক ধরে সুলতান নগর গ্রাম। গ্রামে পাখির খামারের কথা জিজ্ঞাসা করতেই সবাই একবাক্যে এই দম্পতিকে চেনেন। ওই দম্পতির বাড়িতে ঢুকতেই পাখির কলরব শোনা যাচ্ছিল। তখন সালমা ও লোমান পাখিদের পরিচর্যা করছিলেন। বাড়ির পেছনে ও সামনে বড় বড় শেডে পাখির বিশাল খামার। সেখানে লাভবার্ড, বদরিকা, বাজেরিগার, টিয়া, গিরিবাজ, নাইটিঙ্গেল, ককটেল, বদ্রিকা, জেব্রা ফিঞ্চ, স্টার ফিঞ্চ, কবুতরসহ ৪০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

খামারে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা জোড়া জাপানি বাজেরিগার পাখি রয়েছে। আছে ৭ হাজার টাকা জোড়া লাভবার্ড, ৬০ হাজার টাকা জোড়ার কবুতর। সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা জোড়ায় পাওয়া যায় লাভবার্ড।

লোমান বলেন, ‘স্ত্রী শখ করে এক জোড়া পাখি পালতে শুরু করেন। পরে তাঁর পরামর্শে পাখি লালনপালনের চিন্তা আসে। দুজনে আরও কয়েক জোড়া পাখি কিনে আনি। তারপর ইউটিউবে পাখি বাণিজ্যিকভাবে লালনপালনের পদ্ধতি শিখি। দুজনে অক্লান্ত পরিশ্রম শুরু করি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক পাখির খামার গড়ে ওঠে। তারপর পাখি বিক্রিও শুরু করি। এভাবেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

তবে শুরুটা এত মসৃণ ছিল না। বাণিজ্যিকভাবে খামার তৈরির শুরুতেই ধাক্কা খান। এক রাতে খামারের প্রায় সব কবুতরসহ অনেক পাখি চুরি হয়ে যায়। এগুলোর দাম প্রায় লাখ টাকা ছিল। এতে লোমান রেজা একদম ভেঙে পড়েন। রাগে–ক্ষোভে পাখি পালন ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী নাছোরবান্দা। তাঁর কারণেই নতুন করে পাখি ও কবুতর কিনে লালনপালন শুরু করেন। এরপর থেকে এই দম্পতি পালাক্রমে রাতভর খামার পাহারা দেন।

পাখিদের অসুখ–বিসুখ সম্পর্কে জানতে চাইলে লোমান বলেন, শীতের সময় রানিক্ষেত রোগে পাখিরা বেশি আক্রান্ত হয়। সেই সময় তিনি অনলাইনে বিভিন্ন প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন পাখিদের জন্য ৪০ কেজি করে খাবার লাগে। এতে ব্যয় হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এসব খাবার তিনি জামালপুর, টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং রংপুর থেকে কেনেন।