শঙ্কা কাটিয়ে উৎসবমুখর ভোটে আড়ানীবাসী, রাতে আটক ৩০

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিপ্রথম আলো

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনের পরিবেশ পাল্টে গেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট শুরু হয়েছে। সূর্য ওঠেনি। তীব্র শীত। এর মধ্যেই আজ শনিবার সকাল থেকে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক আছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে নির্বাচন–পূর্ববর্তী সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ গতকাল শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বুধবার দিবাগত রাতে আড়ানী বাজারে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। বাজারের শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। পরের দিন রাতে নৌকা সমর্থক দুজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এসব কারণে এলাকাটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। এক দিন আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় নির্বাচনী প্রচারণা। তবে গতকাল রাতে পুলিশ নির্বাচনী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করেছে।

আজ সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। ফলে তীব্র শীত উপেক্ষা করে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে নারী ভোটারদের সারিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। গোচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের শুরু থেকেই মানুষ সারিতে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করা হচ্ছিল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট নিয়ে। এই ওয়ার্ডের নৌকা সমর্থক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান ও তাঁর ভাগনে আরিফ হোসেনকে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুপিয়ে জখম করা হয়। এরপর থেকে এলাকার মানুষের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছিল। কিন্তু রাতে পুলিশি অভিযানের পর মানুষের সেই ভয় অনেকটা কমে গেছে।

নির্বাচনী এলাকার গোচর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভোটার আলিমুল গাজী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে মানুষের মধ্যে একটা শঙ্কা ছিল। কিন্তু পুলিশি অভিযানের পর সেটা অনেকটা কেটে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর। এ জন্য মানুষ ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকেই উপস্থিত হচ্ছেন। মনে হচ্ছে পরিবেশ শান্তিপূর্ণই থাকবে।

আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়। এই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন গৃহবধূ যূথী খাতুন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পরিস্থিতি বেশ ভালো। এ জন্য ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়েছে।

পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুজনকে কুপিয়ে জখম করার পর শুক্রবার রাতে আবার দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য আশঙ্কা ছিল এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ঠিকমতো হবে কি না, কিন্তু সকাল আটটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই এই ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র চকরপাড়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়। ভোটার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় মানুষের মধ্যে রাতের ভীতি কেটে গেছে। তাই এত মানুষ সকালেই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছেন।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, প্রথম দিকে ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে তারা ধৈর্য ধরেছেন, যাতে ভোটের উৎসবের আমেজটা নষ্ট হয়ে না যায়। কিন্তু পরে যখন অস্ত্র নিয়ে লোকজন মাঠে নেমেছে, তখন অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে নির্বাচনী এলাকার একটি মাঠে বসে মদ খাওয়া অবস্থায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মদের বোতলও উদ্ধার করা হয়েছে। আর বাকি যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁরা মামলার আসামি। এখন আশা করা যায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সারা দিন মানুষ ভোট দেবেন।