শতবর্ষী হয়েও জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড
বয়সের ভারে ন্যুব্জ ফুলজান বেগম। বার্ধক্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসা দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোও তাঁর জন্য কষ্টকর। জীবনের শেষ সময়ে একটু সচ্ছলতার আশায় বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। আশ্বাস মিললেও এখনো জোটেনি কোনো কার্ড।
ফুলজান বেগম এখন থাকেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের সাকিনওধা গুচ্ছগ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর জন্মতারিখ ১৯১৭ সালের ১১ আগস্ট। সেই হিসাবে তাঁর বয়স প্রায় ১০৪ বছর। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২ বছর এবং পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী ফুলজান বেগমের বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও এত দিনেও কেউ তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের খইরা গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের স্ত্রী ফুলজান বেগম। প্রায় ৪০ বছর আগে তাঁর স্বামী জলিল মারা যান। তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার ছিল। তবে প্রায় ৩৫ বছর আগে ফুলজান বেগমের বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। আশ্রয়ের জায়গাটুকু হারিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে সরকারি রাস্তার পাশে ও অন্যের জায়গায় কোনোরকমে বসবাস করেন। অবশেষে আশ্রয় মেলে সাকিনওধা গুচ্ছগ্রামে।
প্রায় ২০ বছর আগে ফুলজান বেগমের বড় ছেলে রহিজ উদ্দিন মারা যান। মেজ ছেলে শামসুল ইসলাম দিনমজুরের কাজ করে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। গুচ্ছগ্রামের ছোট একটি ছাপরায় থাকেন ফুলজান বেগম। পাশের আরেকটি ঘরে ছোট ছেলে শাহিদুল ইসলাম, তারঁ স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকেন।
পুরোনো কাপড় ফেরি করে বিক্রি করা শাহিদুল ইসলাম বলেন, বার্ধক্যের বিভিন্ন অসুখে তাঁর মা অসুস্থ। পুরোনো কাপড় ফেরি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। মায়ের চিকিৎসা করানোর মতো টাকাপয়সা তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘মায়ের বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বারের কাছে অনেকবার গেছি। কার্ড দেওনের কথা কত কইলাম, কিন্তু কার্ড আর জুটে নাই।’
ফুলজান বেগম বলেন, ‘জায়গাজমি নাই। এইহানে (গুচ্ছগ্রাম) ছোট ছেলের কাছে থাহি। বউ-পোলাপান নিয়া ওরই সংসার চলে না। তার ওপর আমাকে খাওন-দাওন দিতে ওর ম্যালা কষ্ট হয়। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেইক্যা খুব কষ্টে আছি। অ্যাকটা ভাতার কার্ড পাইলে উপকার অইতো।’
স্থানীয় চালা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য ওই বৃদ্ধার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়েছে। ভাতার কার্ডের বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, নতুন করে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুবিধাভোগীদের তালিকায় ওই বৃদ্ধাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু হবে। ওই বৃদ্ধাকে ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।