শতাধিক বছরের পুরোনা কুমিল্লা টাউন হল ভেঙে নতুন স্থাপনা

স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন কুমিল্লা টাউন হল। কুমিল্লা, ৩ সেপ্টেম্বরএম সাদেক

ঐতিহ্যে লালিত স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ১৩৫ বছরের পুরোনো কুমিল্লা টাউন হল (বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন)। এটি ভেঙে নতুন করে বহুতল স্থাপনা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত বহুতল ভবনে পাঠাগার, একাধিক মিলনায়তন, মহড়াকক্ষ, ভিআইপি লাউঞ্জ, অতিথি কক্ষ, দ্বিতল গাড়ি পার্কিং, প্রবেশ ও বাইরের আলাদা সড়ক, ক্যানটিনসহ নানা ধরনের কক্ষ থাকবে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের স্মৃতি বহন করা টাউন হলটি কুমিল্লাবাসীর গৌরব ও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন কুমিল্লা টাউন হলের বর্তমান স্থাপনা ভেঙে নতুন করে বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনা করার জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গণপূর্ত বিভাগকে কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে একটি নকশা করার জন্য বলে।

গত বুধবার দুপুরে এ নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও কুমিল্লা টাউন হলের সভাপতি মো. আবুল ফজল মীরের সভাপতিত্বে এক সভা হয়। সভায় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আতাউর রহমান, ইতিহাসবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা গোলাম ফারুক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাবুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নীতিশ সাহাসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়া বহুতল ভবন নির্মাণের নকশার ডিজিটাল অ্যানিমেশন উপস্থাপন করেন। সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তি কুমিল্লা টাউন হল ভবনের ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলী ঠিক রেখে বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ‘টাউন হল নিয়ে কুমিল্লাবাসীর মতামত আমরা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

কুমিল্লা টাউন হলের সৌন্দর্য। কুমিল্লা, ৩ সেপ্টেম্বর
এম সাদেক

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুমিল্লার ‘কাগজ প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয় তরুণ ইতিহাসবিদ ও কুমিল্লা টাউন হলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবীরের লেখা ‘কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থ। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৮৮৫ সালের ৬ মে নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের ৩ একর ৪৩ শতক জায়গা নিয়ে কুমিল্লা টাউন হল প্রতিষ্ঠিত হয়। হলের প্রতিষ্ঠাতা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর। দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে ভবনটি নির্মিত। ১৯৩০ সালে এটি প্রথম সংস্কার করা হয়।

২০০২-০৩ সালে এটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। বিভিন্ন সময় কুমিল্লা টাউন হলে উপমহাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তৃতা করেন। মহাত্মা গান্ধী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ডক্টর সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পঁচাত্তরের পরের বাংলাদেশের সরকারপ্রধানেরা এখানে বক্তব্য দেন। কুমিল্লার আন্দোলন–সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু এই টাউন হল।