শয্যা ১৬, ভর্তি ১১৪ শিশু

বারান্দাসহ ওয়ার্ডের মেঝেতে একের পর এক শয্যা বিছানো। অভিভাবকেরা অসুস্থ শিশুদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন।

রোগীতে ঠাসা নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড। গতকাল দুপুরেছবি: প্রথম আলো

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে ১৬টি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও ৯টি শয্যা বাড়িয়েছে। তাতেও অসুস্থ শিশুরা ভর্তি হয়ে শয্যা পাচ্ছে না। মেঝে ও খোলা বারান্দায় ঠাঁই হচ্ছে তাদের। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১১৪ শিশু ছিল শিশু ওয়ার্ডে। সিংহভাগ শিশু জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ওই ওয়ার্ডের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এদিকে গত ১১ দিনে এই ওয়ার্ডে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ওইদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১৯ শিশু ভর্তি হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ১৬টি শয্যার সঙ্গে আরও ৯টি শয্যা যুক্ত করে। গতকাল পর্যন্ত শিশু রোগীর সংখ্যা আর কমেনি। বরং অনেক বেড়েছে। গত ১১ দিনে এই ওয়ার্ডে ৩৭৭ অসুস্থ শিশু ভর্তি হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল এই ওয়ার্ডে নতুন ভর্তি হয়েছে ১৯ শিশু। শুক্রবার ভর্তি হয়েছিল ৩৬ শিশু। শয্যা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে ও খোলা বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অসুস্থ শিশুরা। বারান্দায় থাকা শিশুদের জন্য বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা নেই। হাতপাখায় বাতাস করছেন স্বজনেরা। গরমে ঘেমে অনেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অস্বাভাবিক রোগীর ভিড়ে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সব রোগীকে একসঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পালা করে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। এতে অনেক শিশু ঝুঁকিতে আছে। চিকিৎসক ও নার্সরা একটানা শিশুদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পাশাপাশি শিক্ষানবিশ নার্স, আয়া এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও শিশুদের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। এদিকে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

গতকাল বেলা একটার দিকে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেতে হয়। বারান্দাসহ ওয়ার্ডের মেঝেতে একের পর এক শয্যা বিছানো। অভিভাবকেরা অসুস্থ শিশুদের নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। ওয়ার্ডের প্রবেশপথে গাদাগাদি করে শিশুদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এখানে কথা হয় সিংড়া উপজেলা থেকে আসা মা মিষ্টি বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৬ দিন আগে তাঁর জমজ সন্তান হয়েছে। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় তারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। ওই সময় তাদের অক্সিজেন দিতে দেখা যায়। দুই শিক্ষানবিশ নার্স তাদের গ্যাস সরবরাহ করতে ও ক্যানুলা পরাতে ব্যস্ত ছিলেন। বাবা আলিফ হোসেন জানান, এরা তাঁদের প্রথম সন্তান। তাদের অসুস্থতা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। পরে কোনোরকমে ওয়ার্ডের ভেতর ঢুকে দেখা যায়, পুরো ওয়ার্ড রোগী ও তাদের অভিভাবকে ঠাসা।

* সিংহভাগ শিশু জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে। * বিরূপ আবহাওয়ার কারণে শিশুদের শরীরে ঘাম বসে যাচ্ছে। এতে সর্দি জ্বর ও নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে।

সিংড়ার সোয়াইড় গ্রাম থেকে আসা বিকাশ চন্দ্র জানান, তিনি তাঁর সাত মাসের সন্তান দীপ্তকে নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। দুই দিন খোলা বারান্দায় থাকার পর ভেতরে শয্যা পেয়েছেন। সন্তানের জ্বর-সর্দি সারছে না। তাঁরা হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নিতে চান।

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট সুমনা সরকার জানান, এক মাস ধরে শিশু বিভাগে ভর্তি রোগী ও জরুরি বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রোগীদের ৮০ শতাংশই জ্বর-সর্দি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। পরীক্ষা করে অনেকের নিউমোনিয়া শনাক্ত হচ্ছে। তবে অধিকাংশ রোগীর সাধারণ জ্বর–সর্দি। বেশির ভাগ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে শিশুদের শরীরে ঘাম বসে যাচ্ছে। এতে সর্দি জ্বর ও নিউমোনিয়া দেখা দিচ্ছে।