‘শরীরে ক্ষত নিয়েই ফের ছুটে যাই সম্মুখযুদ্ধে’

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলার ১ হাজার ৪৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পায়ে গুলি লাগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ তালুকদারের। স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয় শরীরের বিভিন্ন স্থানে। চিকিৎসা নিয়ে ফের নামেন লড়াইয়ের ময়দানে। চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রণাঙ্গন থেকে তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। বিজয়ের ৫০ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করেন আবদুস সামাদ তালুকদার।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জেলার ১ হাজার ৪৫০ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের প্রথম প্রহরের স্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করেন। এ সময় অনেকের চোখে পানি এসে যায়।

জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব মুন্সি, পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা স্মারক ও উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ তালুকদার বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পায়ে গুলি লাগে। সহযোদ্ধারা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ২০ দিন বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে ছিলাম। শরীরের ক্ষত নিয়েই আবার ছুটে যাই সম্মুখযুদ্ধে। চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমরা মাদারীপুরের রাজৈরের সমাদ্দার এলাকায় ছিলাম। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের খবর পেয়ে আনন্দে মেতে উঠি। শৃঙ্খলমুক্ত বিজয়ের খবর ছিল অন্য রকম এক প্রাপ্তি। ওই দিন বিকেলে ৫০-৬০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হই।’

শরীয়তপুর সদরের ছুবেদারকান্দি গ্রামের মফিজুল ইসলাম ১৯৭১ সালে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।

গতকাল মফিজুল ইসলাম একাত্তরের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘রাজৈর উপজেলার কলাগাইচ্ছা এলাকায় ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর সম্মুখযুদ্ধ হয়। ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে পালিয়ে যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয়ের খবর পাই ১৬ ডিসেম্বর। আমরা পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় মিছিল বের করি।’