‘শর্ত ভঙ্গে’ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হাটহাজারী মাদ্রাসা

হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় বুধবার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেন। পরে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে
ছবি: সংগৃহীত

আরোপিত শর্ত যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা বাংলাদেশ (হাট হাজারি মাদ্রাসা নামে পরিচিত) পুনরায়  ঘোষণা  না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার ।  

আজ বৃহস্পতিবার  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে  এ বিষয়ে  আদেশ জারি করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের  এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে  এই তথ্য জানিয়েছেন।

গত বুধবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষাসচিব আনাস মাদানীকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিন রাতে মাদ্রাসা পরিচালনার শুরা কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আনাস মাদানীকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
আনাস মাদানী মাদ্রাসাটির মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর ছেলে। আনাস হেফাজত ইসলামের প্রচার সম্পাদক।

আনাসকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতিসহ ছয় দফা দাবিতে মাদ্রাসায় বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্ররা। তাঁরা মাদ্রাসার সব কটি ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। আনাসসহ কয়েকজন শিক্ষকের কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীকে মাদ্রাসার ভেতরে পেয়ে মারধর করেন ছাত্ররা। আহত অবস্থায় তিনি এখন নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ছাত্ররা মাদ্রাসার ভেতরে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন প্রচারপত্র বিলি করেন। সেখানে তাঁরা প্রথম দাবি দেন, আনাসকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতির। অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—আনাস কর্তৃক অব্যাহতি দেওয়া তিনজন শিক্ষককে পুনর্বহাল করা। আনাস কর্তৃক নিয়োগ করা সব অযোগ্য শিক্ষককে ছাঁটাই করা। ছাত্রদের ওপর জুলুম-হয়রানি বন্ধ করা। আহমদ শফী বয়স্ক হওয়ায় একজন দক্ষ আলেমকে মাদ্রাসার পরিচালক নিয়োগ করা। শুরা কমিটির সদস্য আবদুল কুদ্দুস, নুরুল আমীন, আবুল কাসেম ফেনীসহ বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া।

হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, আমির আহমদ শফী ও মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর মধ্যে দীঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ জুন জুনায়েদ বাবুনগরীকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমেদকে। তিনি হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বাবুনগরীর ভাগিনা মাদ্রাসার শিক্ষক আনোয়ার শাহকে মাদ্রাসা থেকে এক মাস আগে বের করে দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে বাবুনগরীর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন আনাসের ওপর। তাঁদের অভিযোগ, আহমদ শফী বয়স্ক হওয়ায় তাঁকে ভুল বুঝিয়ে আনাস এসব কাজ করিয়েছেন। এতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবি নিয়ে হেফাজতে ইসলাম গঠন করা হয়। বছর দুয়েক না যেতেই আমির ও মহাসচিবের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ঘনিষ্ঠ কাউকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্বে রাখতে ২০১৮ সালের মে মাসে ফটিকছড়ির নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস শেখ আহমেদকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে আনা হয়। এর আগে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। তখন তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন