শর্ত ভেঙে পুকুর খননের মাটি ‘ইটভাটায়’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুকুর খননের মাটি দরপত্রের শর্ত ভেঙে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় খননকাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব পাশে, ৩০ মার্চ বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর খননের মাটি দরপত্রের শর্ত ভেঙে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় খননকাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত সোমবার শর্ত অমান্যের অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুকুরের ইজারাদারকে খননকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব পাশের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর তৈরির জন্য দরপত্র হয়। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বুধপাড়া এলাকার মাসুদ রানা দরপত্রে সর্বোচ্চ দর দিয়ে চার বছরের জন্য পুকুরটির ইজারা পান। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বছরপ্রতি তিন লাখ টাকা করে পাবে। কিছুদিন আগে সেখানে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্প এ বিষয়গুলোর দেখভাল করে।

কৃষি প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, খননের পর পুকুরের পাড় বাঁধাই করে অতিরিক্ত মাটি পাশেই রাখতে হবে। এ মাটি ব্যবহারের বিষয়ে কৃষি প্রকল্প সিদ্ধান্ত নেবে। তবে পুকুর খননের মাটি ট্রাক্টরে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে কৃষি প্রকল্প। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে কৃষি প্রকল্প।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কৃষি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি সভা করে। সভায় মাসুদ রানাকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কৃষি প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘তারা একবার পুকুরের মাটি অন্য জায়গায় নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু সে আবেদন “রিজেক্ট” হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরও দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে মাটি বাইরে নেওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’

বুধবার বেলা একটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে অন্তত ছয়টি ট্রাক্টর দেখা গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ট্রাক্টরকে পুকুর খননের মাটি ক্যাম্পাসের বাইরে নিতে দেখা যায়। সেখানে একজন ট্রাক্টরচালকের কাছে মাটি কোথায় রাখা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবুর ভাটায়’।

মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সাংবাদিক ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ছবি তুললে মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন তাঁদের বাধা দেন। তিনি ইজারাদার মাসুদ রানার ভাই। এ বিষয়ে মুঠোফোনে মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘তাঁরা (সাংবাদিকেরা) এসেই ছবি তুলতে শুরু করায় নিষেধ করেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘মাটি কাটার ব্যাপারে তারা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) ভুল বলছে। মাটি কাটার সুপারিশ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জায়গাতেও মাটি দেওয়া হয়েছে।’

শর্ত ভেঙে মাটি বাইরে নেওয়ার ব্যাপারে বুধবার বিকেলে ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, ‘চিঠি না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘আজ কৃষি প্রকল্প থেকে আমাকে ফোন করেছিল। তবে তখন আমি বাইরে ছিলাম, তাই চিঠিতে কী আছে তা জানি না।’

তবে তিনি চিঠিটি দেখে আধঘণ্টা পর মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলেও পরে আর ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম বলেন, ‘চুক্তি ভঙ্গ করায় আজই সভায় করে তাদের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা কেবল একটা আবেদন করেই অনুমতির তোয়াক্কা না করে জোর করে মাটি বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল।’