শহীদ মিনার চত্বর দখল করে অটোরিকশাস্ট্যান্ড

এলাকার লোকজন প্রস্রাব করতে আসে এখন শহীদ মিনার চত্বরে। এতে সেখানে দুর্গন্ধে যাওয়া যায় না।

কমলগঞ্জের শমশেরনগরে শহীদ মিনার চত্বরে সিএনজি অটোরিকশাস্ট্যান্ড। সন্ধ্যার পর এখানটা ভেসে যায় প্রস্রাবেছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ অঞ্চল শমশেরনগর। এখানকার পুরোনো শহীদ মিনারটির বেদির কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় বছরখানেক আগে স্থাপন করা হয় নতুন একটি শহীদ মিনার। এবারই প্রথম নতুন শহীদ মিনারে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হবে। তবে তার আগেই এর চত্বর দখল করে এখানে গড়ে উঠেছে একটি সিএনজি অটোরিকশাস্ট্যান্ড। শুধু তা–ই নয়, ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর এই স্থানে দুর্গন্ধে যাওয়াই দুষ্কর। কারণ, চত্বরে রাখা সারি সারি অটোরিকশার ফাঁকফোকরে গড়ে উঠেছে একটি অস্থায়ী প্রস্রাবখানাও।

এলাকার লোকজন প্রস্রাব করতে আসে এখন শহীদ মিনার চত্বরে। এ কারণে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট তো হচ্ছেই, চত্বরটি হচ্ছে দূষিত; পাশাপাশি এলাকায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এ ছাড়া চত্বর দখল করে সারি সারি অটোরিকশা রাখায় শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে এলাকার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও এখানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আগামীকাল রোববার ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে ৬৯ বছর আগে ১৯৫২ সালের এই দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন ঢাকার রাজপথ। পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের অভূতপূর্ব নজির। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। ফলে বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্বেই দিনটি পালিত হবে।

এ উপলক্ষে কাল সবার সব পথ এসে মিলে যাবে এক অভিন্ন গন্তব্যে—শহীদ মিনারে। হাতে হাতে ফুলের স্তবক, কণ্ঠে চির অম্লান সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’ গেয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাবে আবালবৃদ্ধবনিতা। ভাষাশহীদদের প্রতি নিবেদিত শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ঢেকে যাবে শহীদ মিনারের বেদি। সারা দেশের শহীদ মিনারগুলো তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে শমশেরনগরের প্রধান শহীদ মিনারে দেখা যায় উল্টো চিত্র। শহীদ মিনারটি অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে। এর প্রাচীর ভেঙে শহীদ মিনার চত্বরে গড়ে তোলা সিএনজি অটোস্ট্যান্ডটি চোখে পড়ল। সেখানে সারি সারি রাখা অটোরিকশা আর তার ফাঁকফোকরে পড়ে রয়েছে মানুষের মূত্র।

শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর সড়ক এলাকায় ডাকঘরের সামনে আগে ছিল আকারে ছোট উপজেলার পুরোনো শহীদ মিনার। দক্ষিণমুখী ওই শহীদ মিনারটির বেদির কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় বছরখানেক আগে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ দুই লাখ টাকা ব্যয়ে পূর্বমুখী করে নতুন একটি শহীদ মিনার স্থাপন করে।

শমশেরনগর সাহিত্যাঙ্গনের সমন্বয়ক ও সুজা মেমোরিয়াল কলেজের প্রভাষক শাহজাহান মানিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরোনো শহীদ মিনারের বেদির বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেলে বড় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এবারই প্রথম নতুন শহীদ মিনারে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হবে। এর আগেই উত্তর বাজার সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতি শহীদ মিনারের চত্বরে গড়ে তুলেছে তাদের স্ট্যান্ড। স্থানীয় প্রশাসন বা উপজেলা প্রশাসনের এদিকে কোনো নজর নেই।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা কথা বলে জানা যায়, প্রায় আট মাস আগে হঠাৎ করে শমশেরনগর শহীদ মিনারের পূর্ব দিকের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করানো হয় বেশ কিছু সিএনজি অটোরিকশা। সেই থেকে সারা দিন এখানে থাকে কমপক্ষে ২০টি সিএনজি অটোরিকশা। একই সঙ্গে শমশেরনগর ডাকঘরে প্রবেশের ফটকের সামনে থাকে অটোরিকশার দীর্ঘ সারি। এ অবস্থায় ডাকঘরে প্রবেশ ও রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় লোকজনকে। শহীদ মিনার চত্বরে রাখা সিএনজি অটোরিকশার ফাঁকফোকরে বসে লোকজন মূত্র ত্যাগ করে। সন্ধ্যা হলে যার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি জানেন না কীভাবে সিএনজিচালকেরা শহীদ মিনারের চত্বরে স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছেন। তিনি অবিলম্বে শহীদ মিনার চত্বর থেকে অটোস্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

শমশেরনগর উত্তর বাজার সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি মোস্তফা মিয়া বলেন, এ এলাকাটি ব্যস্ততম। সড়কের ধারে সিএনজি অটোর সারি থাকলে যানজট বেড়ে যায়। তাই তাঁরা শহীদ মিনারের ভেতরের খালি জায়গায় সিএনজি রাখছেন। কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান হলে আবার নিজেদের উদ্যোগে অটোরিকশা সরিয়ে চত্বর এলাকা ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেন। শনিবার ২০ ফেব্রুয়ারি এ শহীদ মিনারের চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবেন।